টলিউডের অন্যতম পছন্দের অভিনেতা তিনি। এখন দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন বলিউডে। ক্রু-কে করিনা, টাবুদের সহ-অভিনেতা। আগামিতে দীপিকা-প্রভাসের সঙ্গে ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’তে কাজ করছেন, রয়েছে অনুরাগ বসুর মেট্রো ইন দিনোর মতো প্রোজেক্ট। আগামী ২৬-এ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে বাঙালির প্রিয় অপুদার (শাশ্বত)-র ‘এটা আমাদের গল্প’। ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ়র ভালোবাসার কাহিনি উঠে এসেছে মানসী সিনহার এই ছবিতে। প্রচারের ফাঁকে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন অভিনেতা।
বন্ধু মানসী সিনহা পরিচালিত প্রথম ছবিতে ষাটোর্ধ্ব প্রেমিক শাশ্বত, কী বলবেন?
শাশ্বত: এখানে আমি মিস্টার শর্মা, খুব ইন্টারেস্টিং চরিত্র। বয়স ষাটের উপর কিন্তু মনের বয়স ২৫! আমারই মতো। ভালো যখন লেগে গেছে ছাড়ব আমি না। আমার জীবন, জীবনে ভালো থাকতে গেলে ওকে (অপরাজিতা আঢ্য) আমাকে পেতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে সমাজের চোখ রাঙানি, কিন্তু এই লোকটা তারই মধ্যে কীভাবে অপরাজিতাকে পটায়, সেটাই দেখবার। উফ! কী না করেছে লোকটা! (হাসি)
শাশ্বতর জীবনে কখনও এমন ‘লেগে থাকা’ প্রেম এসেছে…
শাশ্বত: আমার না সলিড প্রেম করে বিয়েটা হয়নি! প্রেম এসে চলে গেছে। তখন আমার এত ধক ছিল না। মনের কথা বলেছি, আবার পিছিয়ে এসেছি। একদম আমি এখনও রোম্যান্টিক, জীবনে ওটা না থাকলে আর থাকল কী!
আজকাল সম্পর্কে এত তিক্ততা, ডিভোর্স বাড়ছে। কী মনে হয়?
শাশ্বত: তুমি যদি চাও, তুমি জীবনে একা হবে না। তবে তোমাকে সাহস করে এগোতে হবে, আমাদের ছবিতে কিন্তু এটা তুলে ধরা হয়েছে। এদের দুজনের পরিবারের মধ্যেও নানান প্রতিক্রিয়া, কেউ মেনেছে আবার কেউ মানেনি। অনেকেই আছেন একটু বয়স্ক,যারা একা, খুঁজে নিন না… দেখুন পেয়ে যাবেন কাউকে না কাউকে।
বিয়ে নিয়ে ইয়াং জেনারেশনে একটা ফোবিয়া কাজ করছে…বিয়ে কি করতেই হবে?
শাশ্বত: যারা ইচ্ছে করবেন বিয়ে করবেন না, একসঙ্গে থাকবেন। দুজন অ্যাডাল্ট যা করবেন নিজের ইচ্ছেয় করবেন। ইয়াং জেনারেশন তো আজকাল বিয়ের জন্য রেডি নয়। অর্ধেকের বেশি তো বিয়ে করতেই চায় না। আসলে সমাজে এত অস্থিরতা মানুষের ধৈর্য্য কমে যাচ্ছে। দায়িত্ব নেব না, এমন ভাবনা। আগে মানুষ অনেক শান্তিতে থাকতেন।
আজকাল তো কলকাতায় খুব বেশি পাওয়া যায় না, এখন কি এখানে না ওখানে (বলিউড)?
শাশ্বত: আপতত ক'দিনের জন্য কলকাতায়। তারপর আবার ফিরে যাব। আপতত অনুরাগের (বসু) মেট্রো ইন দিনো-র শ্যুটিং করছিলাম। সঙ্গে 'কাল্কি ২৮৯৮ এডি’র কাজ চলছে। আরেকটা নীরজ পাণ্ডে প্রোডাকশনের একটা ওয়েব সিরিজের কাজ শুরু হবে, ডেট চূড়ান্ত হয়নি।
অনুরাগ বসু নাকি অভিনেতাদের হাতে স্ক্রিপ্ট দেন না, সত্যি?
শাশ্বত: হ্যাঁ, এতে অভিনেতাদের কোনও চাপ থাকেন। উনি পুরো চাপটা নিজে নিয়ে বসে থাকেন। অনুরাগ বসু আমাদের পুরোটা বুঝিয়ে দেন আর আমরা অভিনয় করি। সেটা একদম অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি-তে আলিয়ার বাবার চরিত্র প্রথম আপনার কাছে এসেছিল…
শাশ্বত: শানু শর্মা বলে একজন বলিউডের কাস্টিং ডিরেক্টর আছেন, আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তো লাফিয়ে উঠলাম কনসেপ্ট শুনে, তারপর বলা হয়, স্যার চরিত্রটা কত্থক ডান্সারের। শুনেই বলি, আমার মধ্যে ডান্সই তো ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স কোথা থেকে আসবে! বলা হয়েছিল, দেড় মাস শিখলেই হয়ে যাবে। কিন্তু ধ্রুপদী নাচ ছোট থেকে শিখতে হয়, সেটা নিয়ে ছেলেখেলা আমি করতে চাই না। সুতরাং প্রশ্নই ওঠে না!
আফসোস হয়?
শাশ্বত: আমার কোনও আফসোস নেই, টোটার জন্য আমি খুব খুশি। এতদিন পর ওই ছেলেটার একটা দিক সঠিকভাবে এক্সপ্লয়েডেট হল তো।
কমল হাসানের সঙ্গে সদ্য স্ক্রিন শেয়ার করলেন ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’, কী শিখলেন?
শাশ্বত: প্রথম যখন দেখলাম ভদ্রলোককে, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। উনি কিছু একটা বললেন, আমি শুধু মুখ নাড়ানোটা দেখেছিলাম। পড়ে শুনেছিলাম উনি বলেছিলেন, ‘অ্য়ায়সা মত করো’। সেইসময় কথাটা আমার কানে আসেনি। ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে ওঁনার প্রতি যে সম্মান, সেটা সত্যি মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। ওইদিন প্রভাসের শ্যুটিং ছিল না, প্রভাসের মতো সুপারস্টার সারাদিন সেটে বসে শুধু কমল হাসানের অভিনয় দেখল। ভাবা যায় বলুন তো!
বাংলায় এমনটা সম্ভব?
শাশ্বত: এখানে ক'জন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত মানুষ বাংলা ছবি দেখে বলুন তো? কোনও ছবির কুশীলব হয়েও অনেক সময় সেই ছবি আমি দেখতে যাচ্ছি না। দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে কী এটা হয়? ওখানের চিত্রটা একদম আলাদা।
মাস না ক্লাস- কোন ছবিতে বিশ্বাসী শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়?
শাশ্বত: আগে মাস, পরে ক্লাস। একটা ছবি মাস লেবেলে হিট করলে, মাসের মধ্যে ক্লাসও থাকবে। এমন তো নয় ক্লাস অডিয়েন্স মানে আমি ফেস্টিভ্যাল ছাড়া ছবি দেখতে যাব না। আমি তো এন্টারটেন হতে যাব, না হলে তো এত টাকা খরচ করে হলে সিনেমা দেখতে যাব না। বসে থাকব কবে ওটিটিতে আসবে সেই অপেক্ষায়।
শাশ্বত কি চিত্রনাট্যের ব্যাপারে চুজি?
শাশ্বত: হ্যাঁ, না হলে আমি কাহানির পর ২৫টা ছবিতে সাইন করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। রণবীর (কাপুর) তো আমাকে জগ্গা জাসুসের সময় বলেছিল- দাদা পাঁচ বছর টাইম লেগে গেল পরের ছবিটা করতে!
দীপিকার সঙ্গে তো কাজ করলেন, কাছ থেকে কেমন দেখলেন সুপারস্টার দীপিকাকে?
শাশ্বত: এইবারেও আমার দীপিকার সঙ্গে সিন ছিল। দীপিকার সূত্রে রণবীর সিংয়ের সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল। রণবীর বউয়ের শ্যুটিং দেখতে এসেছিল। দীপিকা এত্ত বেশি সিনসিয়ার, ওকে আমি কী না করেছি এই ছবিতে! চুলের মুঠি ধরে হিড় হিড় করে টানছি! আমি ছবির মুখ্য ভিলেন, আমি তো প্রথমে মরে গিয়েছিলাম। তারপর গল্প চেঞ্জ করে, আমাকে বাঁচিয়ে দিল। আর যে আমাকে মেরে দিয়ছিল, তাঁকে মেরে ফেলেছে। আসলে ছবিটা করতে করতে ওরা বুঝেছে এটাকে শেষ পর্যন্ত রাখতে হবে। (হাসি)
হিন্দি তো ঠিক আছে, কিন্তু যে ভাষার সঙ্গে একদম পরিচিতি নেই, সেই তেলুগুতে (দুই ভাষায় তৈরি হচ্ছে কালকি) সংলাপ বলতে অসুবিধা হচ্ছে না?
শাশ্বত: ভীষণ! ওই সময়ের জন্য বুঝে বলতে হচ্ছে, পরক্ষণেই ভুলে যাচ্ছি। ওরা বলছে দাদা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ইমোশনটা কারেক্ট আছে ততক্ষণ ঠিক আছে। করে তো ফেলেছি… পরেরবার অফার ফেলে করব কিনা পাঁচবার ভাবতে হবে। বড্ড কঠিন।
মেয়ে তো বড় হচ্ছে, হিয়ার কি ইচ্ছে রয়েছে অভিনয়ে আসার?
শাশ্বত: হ্যাঁ, ওর ইচ্ছে তো রয়েছে। ও তো ওডিসি শিখেছে, নাচ-টাচ তো ভালো করে। এখন দেখা যাক কতদূর কী হয়!