দেবশ্রী রায়
আমার সব শেষ হয়ে গেল! ভাবিনি এ ভাবে আমার পৃথিবীটা নিমেষে এলোমেলো হয়ে যাবে। তরুণদা নেই! আমি কী করব? কে আমাকে পথ দেখাবে? জানি না। ভাবতে পারছি না।
আমার মা-বাবার মতো ছিলেন তরুণদা আর সন্ধ্যাদি। আমার জীবনের প্রত্যেকটা ধাপে সঙ্গে থেকেছেন ওঁরা। তরুণদা বলতেন, 'আমার তো সন্তান নেই। তুই আমার মেয়ে।' আর সারাটা জীবন ঠিক সে ভাবেই ভালোবেসে গিয়েছেন আমাকে। নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছেন। মূর্তিতে যেন প্রাণদান করেছেন। সেই 'কুহেলি'-তে প্রথম কাজ ওঁর সঙ্গে। তখন আমি কত ছোট! লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন-এর কিছুই বুঝি না। ইন্ডাস্ট্রির অ-আ-ক-খ ওঁর কাছ থেকেই শেখা। আর সেই মানুষটাই আজ আমাকে রেখে চলে গেলেন? একা করে দিলেন তাঁর মেয়েকে?
'বালিকা বধূ'র হিন্দিতে করার সময় আমাকে ডেকেছিলেন তরুণদা। শাড়ি পরিয়ে আমার অডিশনও হল। কিন্তু শেষমেশ আমি মনোনীত হয়নি। উনি বলেছিলেন, এই ছবির জন্য ওঁর আরও একটু পরিণত কাউকে চাই। কথা দিয়েছিলেন, পরের ছবিতে আমাকে নেবেন। এর পরেই হল 'দাদার কীর্তি'। সে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। কত স্মৃতি। কত কথা। ছবির মতো ভাসছে চোখের সামনে।
শেষবার যখন তরুণদাকে দেখতে যাই, তখন উনি কথা বলেননি। আমি ডাকছিলাম, 'তরুণদা ওঠো, আমি চুমকি!' গলা শুনে তাকিয়েছিলেন আমার দিকে। আমি জানি, ঠিক চিনেছিলেন আমায়।
জানি না আজ মানুষটাকে শেষ দেখা দেখতে যাব কি না। ব্যস্ততার মাঝেই চিনেছি ওঁকে। ডুবে থাকতে দেখেছি কাজে। সে ভাবেই মনে রাখতে চাই তরুণদাকে। তবে মেয়ে হিসেবে নিজের কর্তব্য করব। আজ সন্ধ্যাদির পাশে থাকব। আমিই তো ওঁর মেয়ে!
তরুণদা বলতেন, 'আমি চলে গেলেও তুই কাজ করে যাস।' তখন মানুষটাকে খুব বকাবকি করতাম। বলতাম, এ সব কথা মুখে না আনতে। আজ সব ভয় সত্যি করে চলে গেলেন তরুণদা। তবু যেতে পারলেন কি? আমার অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবেন তিনি। যত দিন আমি থাকব, থেকে যাবেন তরুণদা।