রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বদলানো নিয়ে হামেশাই আপত্তি জানান রবীন্দ্র অনুরাগীরা। জীবদ্দশায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘আমার গান যাতে আমার গান বলে মনে হয় এইটি তোমরা কোরো’। রবীন্দ্র সঙ্গীতের মধ্যে একটা স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বা রয়েছে। সেটির প্রতি ইঙ্গিত করেই বিশ্বকবি হয়ত এই কথাটি বলেছিলেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের হাতে শুধু পরিবর্তন নয় বিকৃতও হচ্ছে রবির গান। সেই বিকৃতের অন্যতম কাণ্ডারী নিঃসন্দেহে ইউটিউবার রোদ্দুর রায়।
স্বরবিতানের নিয়ম ভেঙে গান গাওয়ার অভিযোগ উঠছে দেবব্রত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে,তবে রোদ্দুর রায়ের সৌজন্যে আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে অত্যন্ত কুরুচিকরভাবে, অশালীন শব্দ প্রয়োগ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবার নির্দশন সম্প্রতি চোখে পড়েছে বারবার। যা বাঙালি সংস্কৃতির জন্য শুধু দূর্ভাগ্যজনক নয়, অত্যন্ত চিন্তার কারণও বটে।
গত বছর ডিসেম্বরে শান্তিনিকেতনে নন্দমেলা চলাকালীন রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের 'চাঁদ উঠেছিল গগনে' গানটি বিকৃত করে গাইবার অভিযোগ উঠেছিল কলাভবনের একদল ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে। সেই বিতর্কের আঁচ ঠান্ডা হতে না হতেই চলতি বছর মার্চে রবীন্দ্রনাথের নাম বিজড়িত রাজ্যের অপর একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও রবীন্দ্রনাথের এই গানকে বিকৃত করার চিহ্ন মেলে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পংক্তি ব্যবহার করে আবির দিয়ে শরীরে লেখা হয় নানান কু-কথা। ৬ মার্চ রবীন্দ্রভারতীয় বসন্ত উত্সবের এই ঘটনা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
চিহ্নিত করা হয় পাঁচ পড়ুয়াকে, তাঁরা সকলেই ছিলেন বহিরাগত। বিশ্ববিদ্যালয় নয় হুগলির বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী তারা। সিঁথি থানায় দায়ের হয় এফআইআর।ক্ষমা চান ওই পড়ুয়ারা। ঘটনার প্রেক্ষিতে নৈতিক দায় নিয়ে ইস্তাফা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। যদিও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে শেষমেশ পদত্যাগ পত্র ফিরে নেন তিনি।
রবীন্দ্রভারতী ঘটনা চব্বিশ ঘন্টা পার করবার আগেই মালদা জেলার একটি প্রথম সারির স্কুলের চার ছাত্রী অশালীনভাবে বিকৃত করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া ঘিরে ফের শোরগোল পড়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের নিন্দার ঝড় উঠে।মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চান চার পড়ুয়া।এরপরই তাদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অনুমতি দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্রভারতীতে যা ঘটেছে তা নিঃসন্দেহে বাংলার সংস্কৃতির পরিপন্থী। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখনই এই ঘটনা থেকে শিক্ষা না নিলে তা সত্যিই চিন্তার ব্যাপার বাঙালির জন্য। যদিও ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের জমানায় অপসংস্কৃতি ছড়ানো মানুষগুলোকে আটকানোর জন্য কড়া আইনি ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তা সম্ভবপর না হলে ভবিষ্যতে এই রকম ঘটনার সম্মুখীন আবারও হতে হবে বাঙালিকে, আশঙ্কা তেমনই। তবুও এই চিন্তার কালো মেঘ ঢেকে যাক উজ্জ্বল রবির কিরণে-রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে এমনটাই প্রার্থনা আম বাঙালির।