হৃদয়ের চিহ্ন এঁকে লেখা ‘আর কিছুক্ষণ’। বুধবার নতুন সংসদ ভবনে বসে এমনটাই লিখলেন তৃণমূলের ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী। নিজের আসনে বসেই ছবিটি তুলেছেন তারকা সাংসদ, জ্বলজ্বল করছে তাঁর নামের ফলক। টেবিলের স্ক্রিনে ভারতের জাতীয় পতাকা, তার উপরেই লেখা- ‘স্বাগতম শ্রী দীপক অধিকারী’। নীচে সময় লেখা দুপুর ২.৩৭ মিনিট।
এই ছবির মাধ্যমে কি নিজের রাজনীতির ভবিষ্যত জানিয়ে দিলেন দেব? নায়কের হেঁয়ালি ভরা পোস্ট ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। রাজনীতিকে বিদায় জানাচ্ছেন দেব, এই জল্পনা বেশ কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। এর মাঝেই প্রকাশ্যে এসেছে এক ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপ। আর তারপর থেকেই হইচই পড়ে গিয়েছে বাংলার রাজনীতিতে। সেই অডিয়ো-তে দেবের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ। এমপিল্যাডের থেকে ‘৩০ শতাংশ কমিশনের’ কথা বলতে শোনা গিয়েছে। যদিও সেই ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। তবে বিতর্কের আবহে ইনস্টা পোস্টে বিস্ফোরণ দেবের।
গত শনিবার, ছুটির দিনে একসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাশাসনিক পদ থেকে সরে দাঁড়ান দেব। ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান এবং বীর সিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সাংসদ। এই তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকেই তিনি ইস্তফা দেন। এরপর বুধবার দুপুরের এই ইনস্টাগ্রাম পোস্ট জল্পনা জোরালো করল, তবে কি লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয়বার লড়বেন না দেব?
কয়েক ঘণ্টা পর কী হতে চলেছে? ঘাটালের তারকা সাংসদকে ঘিরে চড়ছে জল্পনার পারদ। রাজনীতিতে দেবের বয়স ১০ ছুঁইছুঁই। কেরিয়ারের শীর্ষে থাকাকালীন মমতার ডাকে রাজনীতির মঞ্চে আসা তাঁর। দিদিই তাঁর অনুপ্রেরণা। দু-বার ঘাটালের জয়ী সাংসদ তিনি। রাজনীতিতে থেকেও কাদা ছোড়াছুঁড়িতে বিশ্বাসী নন দেব, বরাবরই খানিক উলটো পথের পথিক তিনি। বিরোধীদের নিয়ে কটূক্তিতে বিশ্বাসী নন দেব।
ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, ঘাটালের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুশি নন দেব। উঠে আসছে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কথাও। প্রসঙ্গত, ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপ ঘিরে দেব জানান, তিনি যা দল সবটা জানিয়েছেন। এর বাইরে কোনও মন্তব্য করতে চান না তিনি। দেব বললেন, ‘দিদিই উত্তরটা দেবেন। আমার কিছু বলার নেই।’ দল দেবের পাশে রয়েছে, সেই কথা স্পষ্ট জানান তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘দেবকে কলুষিত করার জন্য ও দেবের বিরুদ্ধে প্রচার করার জন্য কেউ সজ্ঞানে এই ধরনের কথা বলে, বাইরে ছেড়ে দিয়েছে। কার গলা, সে বিষয়টি দল দেখছে।’
অনেকে এমনটাও বলছেন, দেব নাকি লোকসভা নির্বাচনে লড়তে চান না, তা আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছেন মমতাকে। অনেকে দেবের তিনপদ থেকে ইস্তফার সঙ্গে জুড়ে দিচছেন রাজ্যসভার নির্বাচনকেও। বাংলা থেকে রাজ্যসভার ৫টি আসন শূন্য হতে চলেছে। চলতি মাসের ২৭ তারিখেই ভোট। তার আগে মনোনয়ন পেশ করতে হবে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে। কেউ কেউ বলছেন, রাজ্যসভায় দেবকে প্রার্থী করবেন মমতা। সত্যি কি তাই? সংসদের উচ্চকক্ষে এবার ঠাঁই হবে পর্দার ‘বাঘাযতীন’-এর? উত্তর এখন সময়ের অপেক্ষা।