শিল্পকলার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কী সম্পর্ক থাকতে পারে? এআই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এক সফল জার্মান শিল্পীর কর্মপদ্ধতি অনুকরণ করে তাঁরই মতো ছবি আঁকা সম্ভব হচ্ছে৷ শিল্পী নিজে সেই প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন৷ ছোটবেলা থেকেই লেয়ন ল্যোভেনট্রাউট ছবি আঁকতেন৷ ১৬ বছর বয়সে শিল্পকলার জগতে তাঁকে ‘ওয়ান্ডার চাইল্ড' হিসেবে গণ্য করা হতো৷ তাঁর ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল ‘বেবি পিকাসো'৷
বর্তমানে লেয়ন ৩০ বছরের কম বয়সের সফলতম জার্মান চিত্রশিল্পীদের মধ্যে পড়েন৷ নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেও তিনি খ্যাতি অর্জন করছেন৷ লেয়ন বলেন, ‘শিল্পকলার জগতে দুটি উপাদানের মধ্যে মেলবন্ধনের সুযোগও আমার কাছে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর৷ একদিকে শিল্পকলা, অন্যদিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে শিল্পকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া সত্যি অভিনব৷ সেইসঙ্গে শিল্পের মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন পথে পাড়ি দেওয়া, শিল্পকলাকে আরও উদ্ভাবনী করে তোলা যাচ্ছে৷'
সেই লক্ষ্যেই লেয়ন এক গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন, যার মূল প্রশ্ন হল-– আঁকার সময়ে কোনও শিল্পীর ঠিক কেমন অনুভূতি হয়? সৃষ্টির সৃজনশীল প্রক্রিয়ার সময় তাঁর মস্তিষ্কে কী ঘটে?
কাইজার্সলাউটার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভার্চুয়াল ডিজাইন' মাস্টার ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে লেয়নের মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরিমাপ করছেন৷ সেই নিউরো-ফিডব্যাক দেখিয়ে দিচ্ছে, যে আঁকার সময়ে তিনি এক ট্রান্সের মধ্যে চলে যান৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রো. মাটিয়াস পাফ সেই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা তাঁর ‘মুভমেন্ট ডেটা' নথিভুক্ত করেছি, তাঁর মস্তিষ্কের তরঙ্গ ও তুলির আঁচড় ধারণ করেছি৷ সাউন্ডও রেকর্ড করেছি৷ যা কিছু পরিমাপ করা সম্ভব, সে সবই সংগ্রহ করেছি৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে অ্যালগোরিদম সৃষ্টি করে এই ছবিটি দৃশ্যমান করে তুলেছি৷'
সংগৃহিত তথ্য দিয়ে একটি ‘ইমার্সিভ স্পেস ইনস্টলেশন' সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এক ইন্টারঅ্যাকটিভ সারফেসের মাধ্যমে শিল্পীর কাজের পদ্ধতি অনুভব করা যাচ্ছে৷ লেয়ন ল্যোভেনট্রাউট ছবি আঁকার সময়ে কেমন বোধ করেন, সারফেসের উপর হাত বুলিয়ে তা টের পাওয়া যায়৷ তিনি বলেন, ‘এমন সৃজনশীল প্রক্রিয়ার সময় আমার মনে অনেক চিন্তাভাবনা চলে৷ ছবি আঁকার সময় আমার অভিব্যক্তি ও শক্তি বেড়ে যায়, বিমূর্ত ভাব আসে৷ সেই প্রক্রিয়া শরীরের উপরও কতটা চাপ সৃষ্টি করে, অনেকেরই সেই ধারণা নেই৷ অবশ্যই মস্তিষ্কের উপরেও কম চাপ পড়ে না৷ টানা দুই ঘণ্টা ধরে মনোযোগ দিয়ে সৃজনশীল কাজ করলে মাথার বড্ড পরিশ্রম হয়৷'
শিল্পী হিসেবে ভবিষ্যতে তিনি সেই পরিশ্রম ও কষ্ট এড়িয়ে যেতে পারেন৷ কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সংগৃহিত তথ্যের ভিত্তিতে লেয়ন ল্যোভেনট্রাউটের কাজের পদ্ধতি ও ছবির ভাষার অ্যালোগোরিদম সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ফলে এআই তাঁর মতো করে ছবি আঁকছে৷ কাইজার্সলাউটার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. পাফ বলেন, ‘মস্তিষ্কের কিছু অংশে নির্দিষ্ট সৃষ্টি, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটে৷ অর্থাৎ কাগজেকলমে লেয়নের স্বপ্ন বিশ্লেষণ করে আগের রাতে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছেন পরের দিন তার ভিত্তিতে ছবি আঁকানো যায়৷'
লেয়ন ল্যোভেনট্রাউট আগের মতোই ক্লাসিক চিত্রশিল্পীার রীতি অনুযায়ী ছবি আঁকেন৷ তিনি হয় স্কেচ করেন অথবা ক্যানভাসের উপর অ্যাক্রিলিক রং দিয়ে আঁকেন৷ হাইটেক পুরোপুরি বর্জন করে শুধু আন্তরিকতা ও আবেগ দিয়ে সৃষ্টির কাজে ডুবে যান তিনি৷