মরিচের ঝাল স্বাদ রসনায় বিশেষ মাত্রা যোগ করে৷ কিন্তু এর ঔষধিগুণ সম্পর্কে কতটা জানেন? ব্যথা উপশম, পরিপাকে সহায়তা এবং রোগ প্রতিরোধে মরিচের একটি উপাদান খুব কার্যকরী৷
যে উপাদান মরিচকে ঝাল করে, তাতে ঔষধি গুণও আছে৷ এই উপাদানের নাম ক্যাপসাইসিন৷ এটিই মরিচের গঠনের ভিত্তি৷ ক্যাপসাইসিন এতটাই ঝাল যে চামড়ায় লাগলে জ্বালাপোড়া করে৷ এ বিষয়ে ইকোট্রফোলজিস্ট ডোরিট রোপার বলেন, ‘আমাদের ঝাল লাগে৷ এটা আসলে কোন স্বাদ নয়, এটা এক ধরনের ব্যাথা৷ আর ব্যাথা হলে কী হয়? তখন শরীর এক ধরনের চাপ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখায়, যেমন, আমাদের গরম লাগে, হয়ত ঘামাতে শুরু করি৷ এর অর্থ শরীরের বিপাক সক্ষমতা বেড়েছে৷' এই তাপ পেশির টান শিথিল করে৷ যেমন, গ্রন্থি ও পিঠ ব্যথার ক্ষেত্রে গরম পট্টি ও মলম বিশেষভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে৷
টিনা মাইনকা একজন ডাক্তার ও ব্যথা গবেষক৷ তাঁর মতে, ‘শরীরের একটি বিশেষ রিসেপ্টর সঙ্গে যুক্ত হয়, যাকে আমরা ক্যালসিয়াম চ্যানেল বলি এবং ব্যথা ও তাপ সৃষ্টিকারী ফাইবার বা আঁশ ক্যাপসাইসিনের মাধ্যমে উত্তেজিত হয়, যা শরীরকে উষ্ণ করে তোলে৷'
টিনা মাইনকা ক্যাপসাইসিনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ লক্ষ্য হল, উচ্চমাত্রার স্নায়ু ব্যাথার উপশম খুঁজে বের করা৷ এর চিকিৎসা নেই বললেই চলে৷ এই চিকিৎসক উচ্চমাত্রার ব্যথানাশক পট্টি নিয়ে কাজ করছেন৷ ফার্মেসিতে এখন যেগুলি পাওয়া যায়, তার চেয়ে এটিতে ৪০ গুণ বেশি ক্যাপসাইসিন আছে৷
এর প্রভাব তিন মাস পর্যন্ত থাকে৷ এ সময়টায় স্নায়ুপীড়া সহনীয় মাত্রায় থাকে৷ অবশ্য এই উপশমগুলো কিংবা ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যেসব ব্যাথানাশক পাওয়া যায়, সবগুলোরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে৷ যেমন, চামড়া লাল হয়ে যেতে পারে, কিংবা ফুসকুরি ও চুলকানি হতে পারে৷ বিশেষ করে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য বিষয়টি সংবেদনশীল৷
যা চামড়ায় কাজ করে, তা শ্লেষ্মা ঝিল্লিতেও কাজ করতে পারে, লজেন্সের মতো ব্যবহার করলে৷ ক্যাপসুল হিসেবে ক্যাপসাইসিন পুরো শরীরকে ভেতর থেকে গরম করে তুলতে পারে৷ টিনা বলেন, ‘অল্প ডোজের ক্যাপসাইসিন ট্যাবলেটগুলো গলা ব্যথা উপশমে ব্যবহার করা যায়৷ পরিপাক প্রক্রিয়াকে পোক্ত করতে কিংবা চর্বি কমাতে কেউ কেউ খাবারে পরিপূরক হিসেবে ক্যাপসাইসিন ব্যবহার করেন৷'
সসপ্যানে কাজটি খুব স্বাভাবিক উপায়েই করা যেতে পারে৷ গুরুত্বপূর্ণ হল, মরিচকে অনেকটা সময় ধরে রান্না করতে হবে, যাতে এর উপাদানগুলো বেরিয়ে আসে৷ শুকনো কিংবা কাঁচা- সব মরিচেই ক্যাপসাইসিন থাকে৷ আর খাবারে মরিচ এমনিতেই আমাদের রোগ প্রতিরোধের সহায়ক৷
ইকোট্রফোলজিস্ট ডোরিট রোপারের ভাষায়, ‘লেবুর চেয়েও বেশি ভিটামিন সি আছে মরিচে৷ অবশ্য অধিক তাপমাত্রায় ভিটামিন সি পুরোটা আর অবশিষ্ট থাকে না, অর্থাৎ রান্নার সময় এর অনেকটাই হারিয়ে যায়৷ তারপরও কিছুটা অবশিষ্ট থাকে৷' মরিচ পেশির ব্যথা সারায়, বিপাক প্রক্রিয়াকে পোক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)