প্রায় সকল মহিলাই কম-বেশি ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এ সম্পর্কে নানা ভুল ধারণাও ঘোরাফেরা করতে থাকে। মহিলাদের যৌনাঙ্গ মাঝেমধ্যে এতটাই আজব ব্যবহার করে যে, কোনটা সঠিক এবং কোনটা ঠিক নয় তা বুঝে ওঠা মুশকিল। মহিলাদের তেমনই একটি সমস্যা হল যৌনাঙ্গের ভিজে থাকা বা ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ।
এখন প্রশ্ন যৌনাঙ্গের কী সবসময় ভিজে থাকাটাই স্বাভাবিক? না এটি কোনও সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করছে? জেনে রাখুন ভ্যাজাইনা যদি সবসময় শুকনো থাকে, তা হলে তা চিন্তার বিষয়। অতএব যৌনাঙ্গের ভেজা ভাব স্বাভাবিক।
যৌনাঙ্গ কেন ভেজা থাকে?
শুধু মাত্র কামবাসনা ও যৌন সঙ্গমের সময়েই যে যোনি ভিজে থাকবে, তা নয়। বরং মহিলাদের যৌনাঙ্গ প্রায়শই লুব্রিকেট হতে থাকে। ভ্যাজাইনার দেওয়ালের কোষগুলির মধ্যে তরল পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার ফলে এমনটি হয়ে থাকে। যৌনাঙ্গের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য এবং মসৃণ ও আনন্দদায়ক যৌন মিলনের জন্য ভ্যাজাইনাল ফ্লুয়িড অপরিহার্য।
তবে অধিক ভিজে থাকা ভ্যাজাইনা কী স্বাভাবিক?
যৌনাঙ্গকে সুস্থ রাখার জন্য যে পরিমাণ তরল পদার্থ কোনও মহিলার যোনি উৎপন্ন করে, তাতে ব্যক্তি বিশেষে পার্থক্য দেখা যায়। তবে অত্যধিক ভিজে থাকার মতো কোনও বিষয় এখানে নজরে পড়ে না। কিন্তু এই ভিজে ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। হরমোনের স্তর ও এতে ওঠা-নামা হলে যৌনাঙ্গের ভিজে ভাব প্রভাবিত হতে পারে। তবে অত্যধিক পরিমাণে তরল পদার্থ উৎপন্ন হলে তা যৌনাঙ্গের সংক্রমণের দিকে ইশারা করে।
সেক্সুয়াল অ্যাক্টিভিটি ছাড়া যদি যৌনাঙ্গের তরল পদার্থের উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে, তা হলে এর পিছনে একাধিক কারণ দায়ী থাকতে পারে। মেন্সট্রুয়াল সাইকেল, ব্যাক্টিরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস, পেলভিক কনজেশন সিনড্রোম বা ডেসকোয়ামেটিভ ভ্যাজাইনিটিস ইত্যাদি নানান কারণ এর জন্য দায়ী হতে পারে। আবার নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণেও এটি হতে পারে।
মেন্সট্রুয়াল সাইকেল- মেন্সট্রুয়াল সাইকেলে পরিবর্তনের ফলে শরীরের হরমোন লেভেল প্রভাবিত হতে পারে। এ কারণে অত্যধিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে। মেন্সট্রুয়েশান শুরুর আগে এবং পরে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে।
ব্যাক্টিরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস- এটি একধরনের মাইল্ড ভ্যাজাইনাল ইনফেকশান। তবে একে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিসিস (STD) বলে ভুল করে বসবেন না। কারণ এটি কোনও ভাবেই STD নয়। কিন্তু একাধিক যৌনসঙ্গীর সঙ্গে মিলন ঘটলে এটি STD-তেও পরিণত হতে পারে। যৌনাঙ্গে উপস্থিত ভালো ও খারাপ ব্যাক্টিরিয়ার মধ্যে ভারসাম্যহীনতার কারণে ব্যাক্টিরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস দেখা দেয়। এর ফলে অনবরত পাতলা ও তরল ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হতে শুরু করবে।
পেলভিক কনজেশান সিন্ড্রোম- যৌনাঙ্গ সব সময় ভিজে থাকলে, তার পিছনে পেলভিক কনজেশন সিন্ড্রোমও দায়ী থাকতে পারে। এর ফলে অস্বাভাবিক মেন্সট্রুয়াল ব্লিডিং, ইরিটেবল ব্লাডার ও ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হতে পারে। পেলভিক কনজেশান সিন্ড্রোমে শিরার মধ্যে রক্ত পুল করে যা ভ্যাজাইনার আশপাশের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে। এর ফলে ভেজা ভাব দেখা দেয়। এমন হলে ইউটেরাস, ওভারি ও ভাল্ভায় ব্যথা হতে পারে।
ডেসকোয়ামেটিভ ভ্যাজাইনিটিস- যৌনাঙ্গে কোষের টার্নওভার খুব বেশি হলে ডেসকোয়ামেটিভ ভ্যাজাইনিটিস হয়ে থাকে। এ সময় ভ্যাজাইনার লাইনিংও উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে অত্যধিক পরিমাণে হলুদ ডিসচার্জ হয়ে থাকে। এটি চ্যাটচ্যাটে হলেও এর থেকে কোনও দুর্গন্ধ বেরোয় না। এর ফলে যৌনাঙ্গের আশপাশের অংশ লাল, উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ে। এখানে চুলকানিও হতে পারে। এমনকি যৌন মিলনের সময় ব্যথা হয়।