একটি বয়সে এসে মহিলাদের মেনোপজ হয়ে থাকে— এ বিষয়টি সকলেরই জানা, তবে পুরুষদের মেনোপজের বিষয় জানেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুব কম। তবে পুরুষদের মেনোপজ মহিলাদের তুলনায় খুব আলাদা। মহিলাদের পিরিয়ডস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে মেনোপজ বলা হয়। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন। মহিলাদের মেনোপজের পর তাঁরা প্রজননে অক্ষম থাকেন। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের স্তর কম হলে তাকে মেল মেনোপজ বলা হয়।
মেল মেনোপজ কী?
মেল মেনোপজকে সাধারণত এন্ড্রোপজ বলা হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের হরমোনে পরিবর্তনের কারণে এমন হয়। টেস্টোস্টেরন, এন্ড্রোজেন কমে যাওয়া ও দেরিতে শুরু হওয়া হাইপোগোন্যাডিসম কারণে এমন হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে যায়।
ড: পঙ্কজ আগরওয়াল (Chief Consultant, Agrawal Homoeopathic Clinic, Delhi and Secretary, The Progressive Homoeopathic Society)-এর মতে এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হয়ে থাকে। এতে ব্যক্তির মধ্যে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। তবে অবসাদ বা অন্য কোনও পরিবর্তন দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হোমিওপ্যাথিতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া এই রোগের চিকিৎসা করা যায়। মেল মেনোপজের মতো হরমোনের সমস্যা শুধু যৌন সমস্যাই বাড়ায় না, বরং শরীরের নানান অংশেও প্রভাব বিস্তার করে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করালে হরমোনের সমস্যা ঠিক কর শরীর সুস্থ রাখে।
মেল মেনোপজের লক্ষণ
মহিলাদের মতো পুরুষদের মেনোপজও তাঁদের দৈনন্দিন জীবনকে নানান ভাবে প্রভাবিত করে। পুরুষদের জীবনের কিছু পরিবর্তন দেখে মেল মেনোপজ সম্পর্কে জানা যায়—
১. এনার্জি কমে যাওয়া।
২. মনমরা হয়ে থাকা।
৩. অবসাদগ্রস্ত থাকা।
৪. মনোযোগী হতে না-পারা।
৫. অনিদ্রা।
৬. ওজন বৃদ্ধি বা মাংসপেশী দুর্বল হওয়া।
৭. যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া।
৮. বন্ধ্যাত্ব।
৯. পুরুষদের স্তন বৃদ্ধি।
১০. চুল ঝরা।
১১. হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া।
মহিলাদের থেকে পুরুষদের মেনোপজ কী ভাবে পৃথক
মহিলা ও পুরুষের মেনোপজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। উল্লেখ্ সমস্ত পুরুষের মধ্যে মেনোপজ দেখা যায় না। আবার এর ফলে পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায় না। তবে হরমোন কমে যাওয়ায় যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মেল মেনোপজের কারণ
৫০ বছর বয়সের পর পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন কমে যেতে থাকে। বয়সবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর ১ শতাংশ টেস্টোস্টেরন কমে যেতে শুরু করে। এটি মেনোপজের প্রধান কারণ। এ ছাড়াও পুরনো রোগ যেমন, মধুমেহ, HIV, ফুসফুসের রোগ, গাঁটের সমস্যা বা ফুলে যাওয়া, লিভারের রোগের কারণে শীঘ্র মেল মেনোপজ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও মেদবাহুল্য, অধিক ধূমপান, অবসাদ, ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণেও কোনও পুরুষের মধ্যে শীঘ্র মেল মেনোপজ দেখা দিতে পারে।
শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম হওয়া সত্ত্বেও এর লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করে গেলে যৌন জীবনে এর প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে ব্যক্তির সেক্স ড্রাইভ, যৌন ইচ্ছা, সকালের ইরেকশন ইত্যাদি কমে যায়। এমনকি পুরুষ ইরেক্টাইল ডিসফাংশানের মুখেও পড়তে পারে।
কী করবেন
মেল মেনোপজের প্রতি ভারতীয় পুরুষরা গাম্ভীর্যের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করেন না। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের মধ্যে দেখা দেয়। তবে মেল মেনোপজের কোনও স্পষ্ট কারণ নেই। তবে বিশেষ কিছু বিষয় মাথায় রেখে এই পরিস্থিতিকে কিছুটা সহজ করে তোলা যায়।
মেনোপজের সঙ্গে জড়িত কোনও সমস্যা অনুভূত হলে দেরি না-করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যা যা লক্ষ্য করছেন সে সব নোট করুন। অনেকে লজ্জার কারণে মেল মেনোপজের বিষয় কথা বলেন না। তবে এটি লজ্জার বিষয় নয়। এ সময় একাকীত্ব অনুভব করলে বা মন খারাপ থাকলে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করুন।
টেস্টোস্টেরন টেস্ট করে মেনোপজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পর সমস্যা সমাধানের জন্য চিকিৎসাও করা যেতে পারে। উল্লেখ্য পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করাতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই থেরাপির কারণে হৃদরোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
নিউট্রিশনিস্ট ও ওয়েলনেস এক্সপার্ট বরুণ কাত্যালের মতে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যক্তিকে সুষম ও পুষ্টিখর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এ সময় জাঙ্ক ফুড খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ফ্যাট, শর্করা এবং প্রোটিন টেস্টোস্টেরনের স্তরকে প্রভাবিত করে। নিজের খাদ্য তালিকায় জিঙ্ক (মাশরুম, পালক, ব্রকোলি), ওমেগা ৩ (শুকনো ফল, স্যালমন, সার্ডিন, চিয়া বীজ), ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম (দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য ও সোয়া) সমৃদ্ধ খাবার-দাবার অন্তর্ভূক্ত করুন। খুব মিষ্টি ও নোনতা, ক্যাফিন ও মেদযুক্ত খাবার খাবেন না। এগুলি অধিক পরিমাণে খেলে শারীরিক কর্মক্ষমতা এবং হরমোন তৈরি বাধা পেতে পারে। সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে এর লক্ষণের প্রভাব কমানো যেতে পারে। এর জন্য—
- সুষম আহার
- নিয়মিত ব্যায়াম
- পর্যাপ্ত ঘুম
- অবসাদ থেকে দূরে থাকার বিষয় সুনিশ্চিত করতে হবে।
এর ফলে মেল মেনোপজ দেখা গেলেও এর লক্ষণগুলির কারণে অধিক সমস্যায় পড়তে হবে না।