গায়ের রং ফর্সা হলেই, সবচেয়ে সুন্দরী তিনিই। তাই ফর্সা ত্বক নিয়ে সমাজে রয়েছে ভিন্ন ধরনের আবেশ। যার দরুণ, দেশে ফেয়ারনেস ক্রিমের একটি লাভজনক বাজারও বর্তমান। কিন্তু এই সাময়িক সৌন্দর্য যে কত রোগ ডেকে আনতে পারে, কিংবা এই ক্রিমগুলো যে কি পরিমাণে কিডনির ক্ষতি করছে, তা ধারণারও বাইরে অনেকের। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ত্বক ফর্সা করার জন্য ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহারের কারণে ভারতে কিডনির সমস্যা বাড়ছে। এমনকি ত্বক আরও কালোও করে দেয়।
- ফেয়ারনেস ক্রিম ত্বক কালো করে দেয়
কেরালার অ্যাস্টার এমআইএমএস হাসপাতালের ডাঃ সজীশ সিভাদাস, এই ক্রিমগুলির বিষয়ে সতর্কতা জারি করে পোস্টে লিখেছেন, ভারতে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত এই ক্রিম তাৎক্ষণিক ফলাফলের প্রতিশ্রুতি দেয় ঠিকই। কিন্তু অনেক ব্যবহারকারীরাই রিপোর্ট করেন যে এর ফলে ত্বক আগের চেয়ে অনেক কালোও হয়ে যায়।
- ফেয়ারনেস ক্রিমের কারণে কোন কোন রোগ হতে পারে
মেডিক্যাল জার্নাল কিডনি ইন্টারন্যাশনাল-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ফেয়ারনেস ক্রিমের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে মেমব্রানাস নেফ্রোপ্যাথি (এমএন) এর ঘটনা বেড়েই চলেছে। এটি এমন একটি অবস্থা যা কিডনি ফিল্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমএন হল একটি অটোইমিউন রোগ যার ফলে নেফ্রোটিক সিনড্রোম হয়। এটি এমনই একটি কিডনি ব্যাধি যা প্রস্রাবের মাধ্যমে অত্যধিক প্রোটিন নির্গত করে দেয়।
২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সমীক্ষা অনুযায়ী, অ্যাস্টার এমআইএমএস হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে ক্লান্তি, হালকা ফোলাভাব এবং প্রস্রাবে ফেনা বৃদ্ধির মতো লক্ষণগুলি প্রায়শই পাওয়া গিয়েছিল। সকলের প্রস্রাবে প্রোটিনের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি একজন রোগীর সেরিব্রাল ভেইন থ্রম্বোসিস হয়েছিল। অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে যে ১৫ জন রোগীর মধ্যে, ১৩ জন উপসর্গ শুরু হওয়ার আগে স্কিন-লাইটেনিং ক্রিম ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেছেন। বাকিদের মধ্যে যদিও কেউ কেউ কিছু দেশীয় ওষুধ ব্যবহার করেছিলেন।
গবেষকদের একজন গবেষণাপত্রে বলেছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করলে সমস্যার সমাধান হবে। নাহলে এটি একটি সম্ভাব্য জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে। এই ঝুঁকি প্রতিরোধ করার জন্য, এই ধরনের পণ্য ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে জনসচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং স্বাস্থ্যকে সতর্ক করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাঃ সজীশও জানিয়েছেন, এই ক্রিম শুধু ত্বক বা কিডনির স্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, এটি একটি জনস্বাস্থ্য সংকটও।