অসুস্থদের স্বাস্থ্য ফেরানোর জায়গা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ হোক, কিংবা ‘ল্যান্ড অফ হোয়াইট অর্কিড’! দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি শহর; যার স্থানীয় নাম খার্সাং। অর্থাৎ লেপচা ভাষায় এই কথার অর্থ ‘সাদা অর্কিডের দেশ’। সেই শহরটি হল পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্র ‘কার্শিয়াং’। সেই কার্শিয়াংয়ের মুকুটেই জুড়ল আন্তর্জাতিক পালক। চলতি বছরের কুস্টেনডর্ফ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত উৎসবে দ্বিতীয় সেরা বেস্ট শর্ট ফিল্ম ক্যাটাগরিতে সিলভার এগ অ্যাওয়ার্ড পেল এই পাহাড়ি শহরের ছেলে বিবেক রাই। তার তৈরি শর্ট ফিল্মের নাম ‘শান্তি’। যাতে সম্পূর্ণ এই কার্শিয়াং পাহাড়ের জীবনশৈলীকে তুলে ধরা হয়েছে। ২৩ থেকে ২৮ জানুয়ারি সার্বিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিবেক ছবিটি উপস্থাপন করেন। সেখানেই জুরি সদস্যদের চোখে সেরার তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নেয় পাহাড়ি ছেলের এই শর্ট ফিল্ম ‘শান্তি’। সঙ্গে বিবেকের ঝুলিতে আসে আন্তর্জাতিক সম্মান ‘সিলভার এগ অ্যাওয়ার্ড’। এদিকে এই খবর চাউর হতেই পাহাড় থেকে সমতল; গোটা উত্তরবঙ্গে খুশির আবহাওয়া।
এপ্রিল স্কাইজ ফিল্মস প্রোডাকশন হাউসের ব্যানারে নির্মিত শর্ট ফিল্মটি চিমি আংমু লামার ছোট গল্পের সংকলন ‘এক মুক্তা মুনাল’ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। ১৭ মিনিটের শর্ট ফিল্মটি দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং মহকুমার সিটং-এ শ্যুট করা হয়েছিল। শর্ট ফিল্মটি পূর্বে দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং শিলিগুড়িতে প্রদর্শিত হয়েছিল এবং ২৩ ডিসেম্বর কালিম্পং-এ। পাশাপাশি শীঘ্রই সিকিমেও প্রদর্শিত হয় বলে জানা গিয়েছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা বিবেক রাই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, ‘কুস্টেনডর্ফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪-এ সিলভার এগ অ্যাওয়ার্ড আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের। এখনও ভাবলে গায়ে আশ্চর্য লাগে। কারণ কুস্টেনডর্ফ সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলির মধ্যে একটি। সঙ্গে এই পুরষ্কার প্রাপ্তি যে কোনও চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য একটি বড় ব্যাপার৷ এই বছর আমাদের চলচ্চিত্রের মনোনয়ন পেয়েছে, আমরা সত্যিই অত্যন্ত ভাগ্যবান৷ এটি কেবল আমাদের অনুপ্রাণিত করবে না, কিন্তু এই অঞ্চলের পাশাপাশি গোটা উত্তরবঙ্গ ও পাহাড়ের অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও কাছে এটি গর্বের একটি মুহূর্ত।’
শুধুমাত্র কার্শিয়াং কিংবা দার্জিলিংয়ের নয় গোটা ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন বিবেক রাই। দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা বিবেকের স্কুল জীবন থেকেই পারফর্মিং আর্ট, বিশেষ করে থিয়েটারের প্রতি ঝোঁক ছিল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর, বিবেক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় সুযোগ খোঁজার জন্য নেপালে চলে যান। কয়েক বছর পর, তিনি কেয়ার ইন্ডিয়াতে মনিটরিং এবং মূল্যায়ন অফিসার হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু, তার জন্য জীবনের বিভিন্ন পরিকল্পনা ছিল, কারণ তিনি ২০১৬ সালে তার আহ্বানে স্বীকার করেছিলেন, যা তাকে একজন প্ররোচিত স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাতে পরিণত করেছিল। বিবেক একজন স্ব-শিক্ষিত চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং তার আবেগ তার চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া এবং শেষ পর্যন্ত তার চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুতে দৃশ্যমান।
বিবেক জানান, গল্পের মূল শিরোনাম ‘ফোটস্টেপস অন ফরগটেন স্যান্ডস’। যা একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। যেখানে একজন সিঙ্গেল মা কৃষি কাজ করে তার সন্তানকে লালন-পালন করছেন। নানান যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও সেই মা অসাধারণ সাহস, শক্তি এবং স্থিতিশীলতার পরিচয় দেন। লেখক চিমি আংমু লামার অনন্য কণ্ঠস্বর, জীবন এবং নৈতিকতা সম্পর্কে কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা আমাকে 'শান্তি' ফিল্ম করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘লেখকের ছেলে ছবিটি নির্মাণের জন্য আমাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিল। আমার বন্ধু এবং সিনেমাটোগ্রাফার রাজীব রুনথালাকে ছবিটির জন্য রাজি করানো হয়েছিল। আমরা একটি ছোট দল ছিলাম তাই এটি চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু একরকম আমরা চূড়ান্ত আউতপুট সরবরাহ করতে পেরেছি।’ অন্যদিকে, এপ্রিল স্কাইস ফিল্মসের কথা বলতে গিয়ে বিবেক জানান, তার বন্ধু কর্মা, কুসাং, পেম শেরিং এবং সিদ্ধার্থ মিলে ২০১৫ সালে ‘এপ্রিল স্কাইস ফিল্মস’ প্রতিষ্ঠা করেন, একটি স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত প্রোডাকশন হাউস হিসেবে।
বিবেকদের সমস্ত চলচ্চিত্র এবং প্রকল্প স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়। কারণ বিবেকের দল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে আউটসোর্সিং রিসোর্স না করে সৃজনশীলভাবে লালন-পালন করা এবং উপলব্ধ সংস্থানগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হলে সম্প্রদায়ের প্রতিভাগুলির প্রচারে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিবেক জানায়, এপ্রিল স্কাইস ফিল্মস প্রতিষ্ঠা করাই হয়েছে এই অঞ্চলের সাহিত্য সম্পদ উদযাপন এবং উৎসাহিত করার চেতনা নিয়ে,।যেটি একটি ছোট অঞ্চল, কিন্তু শিল্প ও সংস্কৃতির একটি সুন্দর ভাণ্ডার৷ সিনেমা হল একটি অভিব্যক্তি এবং শুধুমাত্র ক্যাথার্টিক অভিব্যক্তির অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি দুর্দান্ত উপায়৷ তবে সুন্দর গল্পের এই সম্পদের রক্ষা করাও।