যুদ্ধের অঙ্গনেও বারবার ফিরে এসেছে রাখি। অনেক যুদ্ধের আগুন রীতিমতো নিভিয়ে দিয়েছে এই পবিত্র সুতো। সেই ইতিহাসই ফিরে দেখা যাক রাখি বন্ধনের দিনে। রাখির দিনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ। সে কথা সবারই জানা। তবে রবীন্দ্রনাথের আগে ইতিহাসের আরেক ব্যক্তিও জড়িয়েছেন রাখির বন্ধনে। তিনি হলেন সম্রাট পুরু। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, আলেকজান্ডারের সঙ্গে যুদ্ধের আগে তাঁকে রাখি পরানো হয়। কে পরিয়েছিলেন সেই রাখি? জানলে বেশ অবাক হতে হয়। একটা রাখিই নাকি বদলে দিয়েছিল যুদ্ধের সমীকরণ।
(আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে অসুস্থ খুদে, বাঁচাতে এগিয়ে এলেন যাত্রী চিকিৎসকদল! কী হল তার পর)
আলেকজান্ডার ও পুরুর কাহিনি: আলেকজান্ডার ও পুরুর যুদ্ধ হবে। দিন তারিখ সব স্থির হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধের ঠিক কিছু দিন আগে একটি চিঠি পেলেন পুরু। এসেছে সূদূর আলেকজান্ডারের দেশ থেকে। প্রেরক কে? প্রেরক নয় প্রেরিকা। আলেকজান্ডারের স্ত্রী। কী লিখেছিলেন চিঠিতে? ইতিহাসবিদদের একাংশের মত, একটি সুতো পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেটি আদতে ছিল রাখি। পুরুর উদ্দেশ্যে তা পাঠানো হয়। সঙ্গে অনুরোধ, আলেকজান্ডারকে যেন পুরু আঘাত না করে। যুদ্ধে যাই হোক, তার গায়ে যেন আঘাত না করা হয়। ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, পুরু সেই কথা রাখেন। গোটা যুদ্ধে একবারও আলেকজান্ডারের গায়ে আঘাত করেননি তিনি।
(আরও পড়ুন: মাথার মধ্যে বাসা বেঁধেছে পোকা! অস্ট্রেলিয়ার ভয়ঙ্কর কাণ্ডে তাজ্জব গোটা বিশ্ব)
রানি কর্ণবতী ও সম্রাট হুমায়ুন: আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাখ্যান অনুযায়ী, চিতোরের রানি কর্ণবতী ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে একটি রাখি পাঠান। গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহ চিতোর আক্রমণ করেছিলেন। সেই সময় বিধবা রানি কর্ণবতী অসহায় বোধ করেন। তাই হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়ে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন। কর্ণবতীর রাখি প্রেরণে অভিভূত হয়ে যান হুমায়ুন। চিতোর রক্ষার জন্য তখনই সৈন্য পাঠান। তবে হুমায়ুনের সেনা পাঠাতে দেরি হয়। বাহাদুর শাহ রানির দুর্গ জয় করে নেন। জনশ্রুতি, বাহাদুর শাহের সেনাবাহিনীর থেকে সম্ভ্রম রক্ষা করতে রানি কর্ণবতী ১৩,০০০ পুরস্ত্রীকে নিয়ে জহরব্রত পালন করে আগুনে আত্মাহুতি দেন। সেদিন ছিল ১৫৩৫ সালের ৮ মার্চ । চিতোর পৌঁছে হুমায়ুন বাহাদুর শাহকে দুর্গ থেকে উৎখাত করেন। কর্ণবতীর ছেলে বিক্রমজিৎ সিংকে সিংহাসনে বসান। তবে সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের লেখায় রাখি প্রেরণের কথা জানা যায় না। কোনও কোনও ঐতিহাসিক এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তবে মধ্য-সপ্তদশ শতকের রাজস্থানী লোকগাথায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়।