খুব অদ্ভুত একটি সমস্যা নিয়ে লিখতে বসেছি। জানি না, এমন সমস্যায় ক’জন পড়েন?
আমার বিয়ে হয়েছে তিন বছর হল। এখন আমার বয়স ৩২ বছর। আমাদের দু’জনের সংসার তিন কামরার একটি ফ্ল্যাটে থাকি আমরা। সকালে এক জন রান্না এবং ঘরদোর সাফ করার কাজ করে দিয়ে যান। এছাড়া বাড়িতে রোজ আর বিশেষ কারও আসাযাওয়া নেই। তবে বন্ধুবান্ধবরা মাসে এক বার করে আসে। আমাদের দু’জনের আত্মীয়রাও মাঝে সাঝে আসেন। তবে বিশেষ নয়। আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ি কখনও সখনও আসেন। তবে যেহেতু ওঁরা খুব বেশি দূরে থাকেন না, তাই কখনও রাত্রিবাস করেন না।
আমার বর আণার চেয়ে ২ বছরের বড়। আমাদের সম্বন্ধ করে বিয়ে। বিয়ের আগে পরস্পরকে একেবারেই চিনতাম না। তবে কোনও ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপন দেখে সম্বন্ধ নয়, আমাদের দুই বাড়ির যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন পরিচিত। সেই সূত্রেই বিয়ে।
এবার আসি আসল কথায়। বছর তিন আগে বিয়ে হওয়ার মাস খানেকের মধ্যেই আমরা এই ফ্ল্যাটে উঠে আসি। তার আগে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে এক বাড়িতে থেকেছি। তখন বিষয়টি অতটাও চোখে পড়েনি। এখানে আসার পর থেকেই ব্যাপারটি চোখে পড়তে শুরু করল।
রোজই দেখি, আমার বর বেশ খানিকটা সময় বাথরুমে কাটায়। তা সে যে কোনও সময়েই হোক। সকালে অফিস যাওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে ওঠে। জলখাবার বা চা খাওয়ার সময় বাদ দিয়ে প্রায় ঘণ্টা খানেক কেটে যায় বাথরুমে। প্রথম দিকে বিষয়টি বুঝতে পারতাম না। ভাবতাম কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে বোধহয়। কিন্তু তা বলে এক ঘণ্টা!
এই ফ্ল্যাটে আসার প্রথম থেকেই বিষয়টি লক্ষ্য করি। তাই সপ্তাহ খানেক বাদে একদিন জিজ্ঞাসা করি, বিষয়টি কী। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি। ও আমায় বলল, ওর একটু সময় লাগে।
এভাবেই চলছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বিষয়টি ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত তিন বছরে বিষটি বাড়তে বাড়তে প্রায় দেড় ২ ঘণ্টায় পৌঁছে গিয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে কোনও সদুত্তর পাই না।
এই তিন বছরে নানাভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি, কী কী হতে পারে। বলে রাখা দরকার, আমাদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক মোটের উপর স্বাভাবিক। বর্তমানে আমি গর্ভবতীও। তাই সেই সংক্রান্ত কোনও সমস্যা এক্ষেত্রে থাকার কথা নয়।
কখনও কখনও মনে হয়েছে, ও হয়ো বাথরুমের জানলা দিয়ে বাইরে কিছু দেখে। তাই ওর অনুপস্থিতিতে সেটিও খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছি। নাহ! তেমনও কিছু পাইনি।
যা যা সম্ভাব্য, সব ভেবে দেখেছি। কখনও মনে হয়েছে, ও হয়তো বাথরুমে কোনও ধরনের মাদক সেবন করে। কিন্তু তারও কোনও প্রমাণ পাইনি। শুধু আমাদের গায়ে মাখার সাবান অতি দ্রুত শেষ হয়, সেটি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু সেটি দিয়ে তো আর কোনও রকম নেশা করা সম্ভব নয়। তালই সেই সন্দেহ মন থেকে উড়িয়েই দিয়েছি।
কিন্তু এত কিছুর পরেও আজও বিষয়টি আমার কাছে রহস্যই থেকে গিয়েছে। কী করে মানুষটি? এত ক্ষণ ধরে কী করতে পারে? মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন একটি মানুষের সঙ্গে বাস করছি, যার জীবনের একটি দিক সম্পূর্ণ অজানা। সে যেন বাথরুমের চার দেওয়ালের মধ্যে নিজের আর একটা জগৎ তৈরি করে নিয়েছে। সেখানে যেন তাঁর একটা আলাদা জীবন আছে, আলাদা অস্বস্তি আছে।
জানি না, কী করব। কিছু পরামর্শ দিন।
বিশেষজ্ঞের জবাব:
সম্পর্কবিদ মৌমিতা গুপ্ত এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য:
প্রথমেই আপনাকে শুভেচ্ছা, আপনি মা হতে চলেছেন বলে।
এর পরে বলি, একজন মানুষ যদি দিনের পর দিন এমন করতে থাকেন, তাহলে তাঁর স্বামী বা স্ত্রীর পক্ষে বিষয়টি অস্বস্তিকর এবং হতাশাজনক। তাই আপনার অবস্থা যে কতটা করুণ, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
এবার আসা যাক, কী কী কারণে উনি এমন করতে পারেন। আপনি নিজেই বলেছেন, আপনাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক। ফলে বাথরুমে এত ক্ষণ কাটানোর পিছনে যৌনতা সংক্রান্ত কোনও কারণ নাই থাকতে পারে। আবার একেবারে যে পারে না, তাও বলার উপায় নেই। সে সম্পর্কে বুঝতে হলে, হয়তো কোনও মনোবিদের সামনে বসতে হবে, সরাসরি কথা বলতে হবে।
এর পরে আসে নেশার বিষয়। কেউ মাসকাসক্ত হলে, তাঁর সঙ্গী বা সঙ্গিনীর পক্ষে সেটি বোঝা খুব কঠিন নয়। কারণ তাঁর আচার আচরণে সেই নেশার বিষয়টি কিছুটা প্রকাশ পাবেই। ফলে সেই আশঙ্কা একটু দূরে সরিয়ে রাখাই ভালো।
আপনি বলেছেন, আপনাদের সাবান খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। এমন অনেকেই থাকেন, যাঁদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বোধ প্রায় বাতিকের জায়গায় পৌঁছে যায়। মনোবিদ্যায় এই অভ্যাসের আলাদা নামও রয়েছে। হতে পারে, আপনার স্বামী তেমন কোনও বাতিকগ্রস্ত। হয়তো বারবার স্নান করেন, গা পরিষ্কার করেন। তবুও মনে হয়, কোথায় ময়লা থেকে যাচ্ছে। তখন আবার সাফ করতে বসেন। এই সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এরপর পড়ে থাকে আর একটি কারণও। বহু মানুষই দীর্ঘ ক্ষণ বাথরুমে কাটান একা থাকার জন্য। বহু মানুষ, যাঁরা কল্পনার জগতে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাঁদের অনেককেই দেখা গিয়েছে, একেবারে ব্যক্তিগত কিছুটা জায়গা পেতে বাথরুমটিকে ব্যবহার করতে। সাধারণত অন্তর্মুখী বা ইনট্রোভার্ট মানুষের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়। আপনি বলেননি, আপনার স্বামী মানুষটি কেমন। যদি তিনিও খুব চুপচাপ এবং অন্তর্মুখী ধরনের হন, তাহলে এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
শেষ একটি কথাই বলি। এটি আলাদা করে খুব বিরল সমস্যা কিছু নয়। তবে বিষয়টি বাড়াবাড়ি জায়গায় গেলে অবশ্যই কোনও মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। আপনার স্বামী বোঝান। দরকারে নিজে আগে মনোবিদের কাছে যান। তাঁর পরামর্শ নিয়ে এগোন। হয়তো অনেক অন্ধকার কেটে যাবে। হয়তো বিষয়টিকে তখন আর এতটা অস্বাভাবিকও লাগবে না।