প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরালের পরামর্শ শুনলে ১৯৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা রোখা যেত বলে মনে করেন মনমোহন সিং। বুধবার গুজরালের জন্মশতবার্ষিকীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তত্কালীন সরকার যদি ইন্দ্রকুমার গুজরালের পরামর্শ শুনে দ্রুত সেনাবাহিনী মোতায়েন করত, তাহলে এই দাঙ্গা এড়ানো যেত বলেই মনে করেন মনমোহন সিং। ইন্দিরা গান্ধীকে তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষী হত্যা করার পর দিল্লির বুকে ভয়ানক শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় প্রায় ৩০০০ নিরীহ ব্যক্তি প্রাণ হারান।
এদিন মনমোহন জানান যে তিনি ও গুজরাল, দুজনেই অবিভক্ত ভারতের ঝিলাম জেলায় জন্মছিলেন। বর্তমানে সেটি পাকিস্তানের অংশ। মনমোহন বলেন যে তাঁরা দুজনেই পাকিস্তান থেকে রিফিউজি হিসাবে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
ইমার্জেন্সির সময় তথ্য ও সম্প্রচার দফতরের মন্ত্রী ছিলেন ইন্দ্রকুমার গুজরাল। ইমার্জেন্সি সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি করায় গুজরালকে যোজনা কমিশনে বদলি করে দেওয়া হয় বলে জানান মনমোহন সিং। তখন সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন মনমোহন সিং। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে গুজরাল ও মনমোহনের মধ্যে। পরে গুজরালকে রাশিয়াতে বদলি করা হলে সেখানে গিয়ে দু-তিনবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন মনমোহন সিং।
দেশের বারোতম প্রধানমন্ত্রী আইকে গুজরাল ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ে জেলেও ছিলেন তিনি। পঞ্জাবে সন্ত্রাস যখন ধীরে ধীরে জাল ছড়াচ্ছিল, তখন অত্যন্ত উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন গুজরাল। মনমোহন সিং এদিন জানান যে গুজরাল তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরসিমহা রাওকে গিয়ে বলেছিলেন যে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, দ্রুত সেনাবাহিনীকে ডাকা হোক। সেই কথা শুনলে শিখ-বিরোধী দাঙ্গা রোখা যেত বলেই মনে করেন মনমোহন সিং।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, পীযূষ গোয়েল, এস জয়শংকর, হামিদ আনসারি, সীতারাম ইয়েচুরি, শরদ পাওয়ার। ভারত-সোভিয়েত সম্পর্ক শুধরানোর ক্ষেত্রে গুজরালের অবদানের কথা বলেন বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর। একই সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুজরাল ডকট্রিনের প্রাসঙ্গিকতার কথাও উল্লেখ করেন জয়শংকর।