করোনা মহামারি যে শুধু অনেকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তাই নয়৷ করোনার বিস্তারিত ঠেকাতে আমরা যে এখন নিয়মিত মাস্ক পরছি সেগুলোর অনেকগুলোই সাগরে গিয়ে পড়ছে৷
বিজ্ঞানীদের ধারনা, গতবছর প্রায় ১৫০ কোটি মাস্ক সাগরে গিয়ে পড়েছে৷ এসব মাস্কে থাকা বিভিন্ন উপাদান পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর৷ সাগরে বাস করা প্রাণীদের জন্যও এগুলো বিপজ্জনক৷
হংকংয়ের কাছে সকো দ্বীপপুঞ্জের পানি অনেকদিন ধরেই দূষিত হচ্ছিল৷ তবে করোনা মহামারির সময় নতুন এক আবর্জনার দেখা পাওয়া যাচ্ছে- মাস্ক৷
ওশান্স এশিয়ার অপারেশন্স ডাইরেক্টর গ্যারি স্টোকস বলেন, ‘‘এখন আমাদের মাস্কের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে৷ করোনার কারণে এখন এসব সৈকতে ভেসে আসছে৷ এসব দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগে: আমাদের পৃথিবীর জন্য এই মাস্ক কতটা বিপজ্জনক? কেন এত মাস্ক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট না হয়ে সাগরে এসে পড়ছে? এবং এগুলো ধ্বংস করার সঠিক উপায় কী?''
জার্মানির একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা ব্যার্নহার্ড শোড্রোভস্কি বলেন, ‘‘উচ্চমানের হোক কিংবা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক, বা রাবারের গ্লভস, যেগুলো এখন অনেকে ব্যবহার করছেন, সবই ময়লার পাত্রে ফেলার কথা৷ এগুলো রিসাইকেলের উপযোগী নয়৷ কারণ এগুলো মেডিকেল আবর্জনা, এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে৷ সে কারণে এগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে৷’’
কিন্তু দেখা যাচ্ছে সব মাস্ক পোড়ানো হচ্ছেনা৷ সাগরগুলো মাস্কে ভরে যাচ্ছে৷ পানিতে বাস করা প্রাণীর জন্য সেগুলো কতটা ক্ষতিকর? কী দিয়ে মাস্ক তৈরি করা হয়? এসব জানতে ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদক ফার্মেসি থেকে একটি এফএফপি২ মাস্ক কিনেছিলেন৷ এরপর বার্লিনের সুপারমার্কেট থেকে আরেকটি মাস্ক কিনেছিলেন৷ এরপর অনলাইনে আরও দুই ধরনের মাস্ক অর্ডার করেন৷ এরপর সব মাস্ক প্যাকেট করে পরীক্ষার জন্য একটি টেক্সটাইল ল্যাবরেটরিতে পাঠান৷ ঐ প্রতিবেদকের আশা ছিল, ঐ ল্যাবরেটরি তাকে মাস্কগুলো কী দিয়ে তৈরি, তা জানাতে পারবে৷ পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তাও বলতে পারবে৷
দুই সপ্তাহ পর ল্যাব থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়৷ ভালো খবর হচ্ছে, মাস্ক পরা আমাদের মানুষদের জন্য ক্ষতিকর নয়৷ দিনে আট ঘণ্টা মাস্ক পরে থাকা ঠিক আছে৷ কিন্তু পরিবেশের জন্য গল্পটা অন্যরকম৷
সিটিএল ল্যাবরেটরির ফাইট হুবেন বলেন, ‘‘আপনি যদি গ্রামের কোনো খোলা জায়গায় মাস্ক ফেলেন তাহলে শুরুতেই সেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাস্কের কিছু উপাদান যেমন পলিপ্রোপিলিন ডিকম্পোজ হতে অনেক সময় লাগে৷ এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং এ কারণে মাস্ক সবসময় ঠিক জায়গায় ফেলা উচিত৷ যদি সবাই বনের যেখানে-সেখানে মাস্ক ফেলেন তাহলে সেটা অনেকদিন সেখানেই থেকে যাবে৷’’
এক পর্যায়ে সেটা মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়৷ যে কারণে মাস্ক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ হংকংয়ের সৈকতে বিজ্ঞানীরা অনেক মাস্ক পাচ্ছেন৷ তাদের ধারনা, গতবছর প্রায় ১৫০ কোটি মাস্ক সাগরে গিয়ে পড়েছে৷
ওশান্স এশিয়ার অপারেশন্স ডাইরেক্টর গ্যারি স্টোকস বলেন, ‘‘প্রথমেই আমাদের মাস্ক একবার ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার কীভাবে মাস্কের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে সেটা দেখতে হবে৷ যেমন এখানে রাস্তায় থাকা ডাস্টবিনের মুখ অনেক বড়৷ মানুষ সেখানে মাস্ক ফেলে ভাবছে যে তারা ঠিক কাজটি করছেন৷ কিন্তু বাতাস এলে এগুলো সহজেই উড়ে যায়৷ আর, একবার রাস্তায় পড়ে গেলে সেগুলো ড্রেনে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এই ড্রেনগুলো সাগরে গিয়ে মিশেছে৷ সুতরাং ব্যক্তিগত পর্যায় ছাড়াও সরকারি স্তরে উদ্যোগ থাকতে হবে৷’’
মনে হচ্ছে শিগগিরই মাস্ক পরার হাত থেকে রেহাই নেই৷ ইতিমধ্যে সাগরে অনেক মাস্ক পড়ে গেছে৷ তবে আমরা যদি নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করি তাহলে অন্তত সমস্যা আরও বড় হওয়া ঠেকানো যেতে পারে৷