গরম পড়তেই হু-হু করে বাড়িতে চলছে এসি। বাড়ছে বিদ্যুতের বিল। এতটাই বিদ্যুতের বিল আসছে যে পকেটে রীতিমতো ছ্যাঁকা লাগছে। মাসের শেষে বা শুরুতে বিদ্যুতের বিল দিতে একটা বড় অঙ্কের টাকা পকেট থেকে খসে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি একটু বুদ্ধি করে এসি ব্যবহার করলেই অনেকটা কমে যাবে বিদ্যুতের বিল। অর্থাৎ গরম তো লাগবেই, সেইসঙ্গে বিদ্যুতের বিল দিতে প্রতি মাসে কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা খরচ হবে না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ১৮ ডিগ্রিতে না চালিয়ে কেউ যদি এসির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রিতে রাখেন, তাহলে তাঁর বিদ্যুতের বিল ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
কীভাবে এসি ব্যবহার করা উচিত?
অনেকের ধারণা যে এসির তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি করে দিলে হু-হু করে ঠান্ডা হয়ে যাবে ঘর। কিন্তু সেটা মোটেও ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রিতে (যা বর্তমানে দক্ষিণবঙ্গে দিনের বেলায় বাইরের তাপমাত্রার থেকে অনেকটাই কম) নামতে যতক্ষণ সময় লাগবে, ১৮ ডিগ্রিতে নামতে ততটাই সময় নেবে। তবে ২৬ ডিগ্রির পরিবর্তে এসির তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি থাকলে তাতে নিশ্চিতভাবে বেশি ঠান্ডা লাগবে।
তবে বিষয়টা তো শুধু ঠান্ডা হওয়ার নয়। কারণ এসির তাপমাত্রা যত কমিয়ে দেবেন, তত বেশিক্ষণ এসির কম্প্রেসরকে কাজ করতে হবে। বাড়বে বিদ্যুতের ব্যবহার। স্বভাবতই বিদ্যুতের বিল বাড়বে। সেখানে আপনি যদি এসির তাপমাত্রা ২৪ বা ২৬ ডিগ্রিতে রাখেন, তাহলে কম্প্রেসর অনেক কম সময় কাজ করবে। কমবে বিদ্যুতের বিল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘আর্দ্রতা অত্যন্ত বেশিও হলে (এসির তাপমাত্রা) ২৪ ডিগ্রিতে রাখলেই পরিস্থিতি মনোরম থাকে। সেইসঙ্গে ১৮ বা ২২ ডিগ্রিতে এসির তাপমাত্রা রাখলে যতটা বিদ্যুৎ খরচ হবে, তার থেকে এক্ষেত্রে (এসি ২৪ বা ২৬ ডিগ্রিতে থাকলে) অনেক কম খরচ হবে।’
কমবে খরচ
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে বিভিন্ন মাপকাঠি পূরণ হলে ২৯ ডিগ্রিতেও ভারতের মানুষ স্বস্তিবোধ করেন। সেই পরিস্থিতিতে অহেতুক অত্যধিক এসির তাপমাত্রা কমানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের বক্তব্য, এসির তাপমাত্রা প্রতি ডিগ্রি বাড়ালে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ বিদ্যুৎ বাঁচানো যায়। উদাহরণস্বরূপ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কেউ যদি ১৮ ডিগ্রির পরিবর্তে এসির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রিতে রাখেন, তাহলে বছরে প্রায় ৭,০০০ টাকা খরচ হবে। শুধু তাই নয়, বছরে ৯৬০ কিলোওয়াট হাওয়ার্স বাঁচাতে পারবেন (আট মাস এসি ব্যবহার করা হবে ধরে নিয়ে সেই হিসাব করা হয়েছে)।
আরও পড়ুন: Power cut in Kolkata: যত ভুল মানুষের! AC-র ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কারেন্ট অফের দায় ঝাড়ল ‘এক নম্বর’ বাংলা
কী কী বিষয় মনে রাখতে হবে?
এসি চললে কত বিদ্যুৎ খরচ হবে, সেটা শুধুমাত্র কত ডিগ্রিতে এসির তাপমাত্রা রাখা হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘স্টার রেটিং, বাইরের তাপমাত্রা, কতক্ষণ ব্যবহার করা হচ্ছে, ঘরের আয়তন, ঘরে কতজন মানুষের সংখ্যা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে যে আপনার এসি কত পরিমাণে বিদ্যুৎ টানবে।’
তাঁদের বক্তব্য, অনেকেই এসির তাপমাত্রা একেবারে কমিয়ে দিয়ে গায়ে চাদর বা হালকা কম্বল চাপা দিয়ে ঘুমোতে পছন্দ করেন। কিন্তু সেই বিষয়টি স্বাস্থ্যের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়। কারণ মানবদেহের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬-৩৭ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সেখানে গরমকালে বাইরের তাপমাত্রা অনেকটা বেশি হয়। আবার যদি একেবারে এসির তাপমাত্রা কমিয়ে দেন, তাহলে ঘরের এবং বাইরের তাপমাত্রার মধ্যে আকাশ-পাতাল হয়ে যাবে। যা আখেরে শরীরের পক্ষে খারাপ। আবার এসির তাপমাত্রা একেবারে কমিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে ঘুমোলে আদতে অকারণে বিদ্যুতের অপচয় হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও বেশি বিল আসে। মাসের শেষে বিদ্যুতের বিল দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা বেরিয়ে যায়। অর্থাৎ জোড়া বিপদ হয়।