তাইওয়ানের সঙ্গে সরাসরি কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই আমেরিকার। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে চিনের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে তাইওয়ানকে সমর্থন করে এসেছে ওয়াশিংটন। তবে এরই মাঝে এবার চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট বললেন, 'তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করে না আমেরিকা।' তিনি আরও জানিয়ে দেন, ওয়াশিংটন এখনও 'এক চিন' নীতিতে বিশ্বাস করে। তাঁর এই মন্তব্য চিন ও আমেরিকার সম্পর্কের ক্ষতে কিছুটে প্রলেপ দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিকবার দাবি করেছেন, চিন যদি তাইওয়ানে হামলা চালায়, তাহলে তারা তাইওয়ানের রক্ষার্থে এগিয়ে আসবে। তবে ব্লিনকেনের এই মন্তব্যে আমেরিকার তাইওয়ান নীতি নিয়ে ফের ধন্দ তৈরি হল।
প্রসঙ্গত, তাইওয়ান ইস্যুতে বারবারই সম্পর্ক বিগড়েছে চিন এবং আমেরিকার। এদিকে আগামী বছর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে সেদেশের অর্থনীতির দিকে নজর দিতে হবে বাইডেন প্রশাসনকে। এবং মার্কিন অর্থনীতির প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে চিন। আবার আগামী বছর তাইওয়ানেও নির্বাচন রয়েছে। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই তাইওয়ান সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের বাহুবল দেখিয়ে আসছে চিন। এমনকি বহুবার তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে চিনা যুদ্ধবিমান। এই আবহে চিন যদি তাইওয়ানের ওপর সত্যি সত্যি হামলা করে, তাহলে আমেরিকার অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে কৌতুহলী সবাই।
গত অগস্ট থেকেই তাইওয়ানকে ঘিরে ধরে ব্যাপক সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছিল চিন। মার্কিন কংগ্রেসের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে যাওয়ার পর চিনা হামলার আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল কয়েক গুণ। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে চাইছে আমেরিকা। এই আবহে ব্লিনকেনের 'এক চিন' নীতি নিয়ে এই মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত বিশ্লেষকদের। এদিকে ব্লিনকেন তাইওয়ান ইস্যুত এও বলেন, 'কোনও পক্ষই যাতে একতরফা ভাবে স্থিতাবস্থা না বদলায়।' এদিকে বিগত কয়েক বছর ধরে তাইওয়ানের সেনাকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে আমেরিকা।
এদিকে গতকাল বেজিংয়ের টিয়ানানমেন স্কোয়ারের পঞ্চিমে অবস্থিত 'গ্রেট হল অফ পিপল'-এ ব্লিনকেন এবং জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। আমেরিকার সমস্যার কথা এই বৈঠকে তুলে ধরেছেন ব্লিনকেন। তিনি অভিযোগ করেন, উচ্চ পর্যায়ে কথোপকথন এড়িয়ে যায় চিন। তিনি বলেন, 'চিনের সঙ্গে সামরিক পর্যায়ে আলোচনার জন্য আবেজন জানিয়েছিল আমেরিকা। এর ফলে অনেক সময়ই সংঘাত থামানো সম্ভব হতে পারে। তবে চিন এই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি।' এদিকে জানা গিয়েছে, ব্লিনকেন শিনজিয়াং, তিব্বত এবং হংকংয়ে মানবাধিকার লঙ্গন নিয়েও কথা বলেছেন জিনপিংয়ের সঙ্গে। তাছাড়া চিনে মার্কিন নাগরিকদের আটকে রাখার বিষয়টিও উত্থাপিত করেছেন ব্লিনকেন। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি, ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয় নিয়েও কথা হয় দু'জনের মধ্যে।