অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাট বাঁধছে। ইউরোপের মেডিসিনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে। সেই একই ভ্যাকসিন প্রয়োগ হচ্ছে ভারতেও। তাহলে কতটা নিরাপদ এই টিকা? তারই উত্তর দিলেন AIIMS-এর প্রধান ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া।
ভারতে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকার নাম কোভিশিল্ড। উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। ভারতে অনুমোদন পাওয়া দুটি ভ্যাকসিনের মধ্যে একটি এটি। এই কোভিশিল্ডের থেকে কি রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে? এর উত্তরে ডঃ গুলেরিয়া বললেন, '১০ লাখ জন কোভিশিল্ড গ্রাহকের মধ্যে এখনও পর্যন্ত একজনেরও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ফলে এই ধরনের কেস বেশ বিরল।'
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বিরল ঘটনা। এখনও এখানে সেরকম কিছুই হয়নি। তবে হ্যাঁ, আস্তে আস্তে একটা-দুটো এই ধরনের ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে।'
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতোই অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিন আংশিক স্থগিত করেছে ফিলিপিন্স। সেখানে শুধুমাত্র ৬০-এর কম বয়সিদেরই এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেনও।
গত সপ্তাহেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (EMA)। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্ত জমাট বাঁধার রাখা উচিত, মত EMA-র। 'সম্ভবত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াতেই রক্ত জমাট বাঁধা ও প্লেটলেট সংখ্যা হ্রাসের মতো ঘটনা ঘটছে। হেপারিন দিয়ে চিকিত্সা সময়েও এমনটাই দেখা যায়,' দাবি EMA-এর।
অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণে কোনও ঝুঁকি নেই বলেই জানিয়েছে ইউরোপিয়ান মে়ডিসিনস এজেন্সি। EMA-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এমার কুকের কথায়, 'করোনা থেকে প্রাণহানির সম্ভাবনা অনেক বেশি। তার তুলনায় টিকা থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা নগণ্য।' 'আমরা আমাদের কোভিড নাইন্টিন ভ্যাকসিনটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনতার বিষয়ে সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই। বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ থেকেই এটা বলা। ভ্যাকসিনের সুরক্ষা আমাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। এই বিষয়ে সর্বক্ষণ সতর্ক ও কর্মরত আমাদের সংস্থা,' বিজ্ঞপ্তিতে জানায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণের পর গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার অভিযোগ এসেছে একাধিক দেশ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে নরওয়ের থেকে। সেখানে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। একাধিক সূত্রে দাবি, রক্ত জমাট বাঁধা, রক্তে প্লেটলেট-এর সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তাঁদের শরীরে। ফলে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডেভেলপ করা এই ভ্যাকসিনকে ভালো চোখে দেখছে না বহু দেশ।
ফ্রান্স, জার্মানি ও সুইডেনে শুধুমাত্র অল্পবয়সিদেরই দেওয়া হচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। অন্যদিকে ডেনমার্ক ও নরওয়েতে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। এই টিকা গ্রহণ করে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের ওষুধের নিয়ামকও। ব্রিটেনে মোট ৭৯টি ক্ষেত্রে এই টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।