রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিদর্শককে বাংলাদেশের এক নেতা জানান বাংলাদেশের অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে যে সহস্রাধিক রোহিঙ্গারা আছেন তাঁদের যেন এবার মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। একসময় তাঁরা মায়ানমার থেকে নিপীড়ন, অত্যাচারের শিকার হয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দেশের রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ করেছেন। এরপর গত রবিবার অর্থাৎ, ১৪ অগস্ট তিনি কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে যান।
শেখ হাসিনার মতে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের বাসিন্দা, তাঁদেরকে সেই দেশে ফেরত যেতেই হবে। কিন্তু ওদিকে, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট মায়ানমার এই মুসলিম সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গা জাতিকে বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। সেখানে তাঁদের উপর করা হয় অকথ্য অত্যাচার। এরপর ২০১৭ সালে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। অবস্থার অবনতি আরও ঘটে যখন গত বছর সেনারা মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন।
তাঁদের মায়ানমারে পাঠানো হবে কী, হবে না এই টানাপোড়েনের মাঝেই তাঁরা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ পালিয়ে আসার পঞ্চম বর্ষপূর্তি পালন করে ফেলল। এই মাসের শুরুতেই বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইর কথা হয়। তাঁকে এই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বলা হয়। চিন ২০১৭ সালেই মায়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে।
বহুবার হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রীদের গলায় ক্ষোভ শোনা গিয়েছে যে মায়ানমার কিছুই করছে না রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত নেওয়ার জন্য। অন্যদিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ উদ্যোগ নিলেও রোহিঙ্গারা আর মায়ানমারে ফেরত যেতে চাইছেন না, তাঁরা মনে করছেন আবার ওদেশে ফিরে গেলে তাঁদের উপর অত্যাচার করা হবে তাঁরা আশঙ্কা করছেন যে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
বুধবার, অর্থাৎ ১৭ তারিখ ব্যাচেলেট যখন আবার এই ক্যাম্প পরিদর্শনে যান তখন রোহিঙ্গারা তাঁকে জানান মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা যেন আগে ঠিক করা হয়। তারপর তাঁদের যেন ফেরত পাঠানো হয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাঁদের অভিযোগ, যন্ত্রণার কথা ব্যাচেলেটের কাছে জানিয়েছে। ব্যাচেলেটে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন যে মায়ানমারের পরিস্থিতি ঠিক করেই তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে এবং সেটা স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সঙ্গে।