সদ্য সমাপ্ত বিহার বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করার জন্য এই প্রথম প্রকাশ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুখ খুলল মহাগঠবন্ধন শরিক আরজেডি। সমালোচনার কোপ থেকে বাদ পড়লেন না রাহুল গান্ধীও।
রবিবার দলের বর্ষীয়ান নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি শতাব্দী প্রাচীন দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে গা-ছাড়া মনোভাবের অভিযোগ তোলেন। মুখস্পষ্ট বক্তা হিসেবে পরিচিত তিওয়ারি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকেও ছাড় দেননি। তাঁর অভিযোগ, বিহার নির্বাচনের সময় অনুপস্থিত থেকে বোন তথা উত্তর প্রদেশের দায়িত্বে থাকা এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার শিমলার বাড়িতে ছুটি কাটাতে ব্যস্ত ছিলেন রাহুল।
তিন দফার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সংগ্রহে এসেছে ৭০টির মধ্যে মাত্র ১৯টি আসন। এর জেরে আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয় যে, কংগ্রেসের খারাপ ফলের কারণেই এনডিএ-র কাছে স্বল্প ব্যবধানে হার স্বীকার করতে হয়েছে।
তিওয়ারির অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট রাহুল গান্ধী। কিন্তু রাহুলের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক প্রচারসভা করেছেন মোদী। আসন বণ্টনের সময় কংগ্রেস ৭০টি আসন চেয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তার জন্য ৭০টি প্রচারসভাও তারা করেনি। এতগুলি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বিহার বিধানসভা নির্বাচনে যথেষ্ট চেষ্টা করেনি কংগ্রেস। নির্বাচনের সময় রাহুল শিমলায় তাঁর বোনের বাড়িতে পিকনিক করছিলেন। এ ভাবে কি কোনও দল চালানো যায়? দল পরিচালনায় কংগ্রেসের গুরুত্বহীন প্রচেষ্টার জেরে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে যে প্রকারান্তরে বিজেপি-কেই তারা সাহায্য করেছে।’
একই সঙ্গে ২০১৭ সালের লোক সভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে খারাপ ফলের জন্যও রাহুল গান্ধীকে দায়ী করেছেন আরজেডি নেতা। সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে হাত মিলিয়েও শেষ পর্যন্ত ৪০৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫৪টি আসন জিততে পেরেছিল কংগ্রেস।
তিওয়ারির দাবি, দলের মধ্যে পরিবর্তনের আবহ আনতে ব্যর্থ কংগ্রেস নেতৃত্ব। একই সঙ্গে গুলাম নবি আজাদ, শশী থারুর, মনীশ তিওয়ারির মতো শীর্ষস্থানীয় নেতারা কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধীর কাছে বড়সড় পরিবর্তন ঘটানোর আবেদন জানালেও তা শোনা হয়নি।
এমনকি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বিরুদ্ধে আক্রমণ হেনে প্রাক্তন আরজেডি সাংসদ অভিযোগ করেন, ‘সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে চার আসনে উপ-নির্বাচনে সাতটি আসনের মধ্যে চারটিতেই জমানত জব্দ হয় কংগ্রেসের। এ ভাবেই উত্তর প্রদেশে দলের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এক শক্তিশালী কংগ্রেসকে দেখতে চাই। আজ গণতন্ত্র বিপন্ন। বিশেষ করে বিজেপি-র শাসনে দেশে বিপুল হারে নাগরিকের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে না কংগ্রেস। দল হিসেবে কংগ্রেসের উচিত বিজেপি-র কাছে জোট রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষা নেওয়া। বিহার নির্বাচনে জোটসঙ্গীর প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করেছে কেন্দ্রের শাসকদল। জেডি-ইউ মাত্র ৪৩টি আসন পেলেও নীতীশ কুমারকেই মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসাতে রাজি হয়েছে বিজেপি।’
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আর এক মহাগঠবন্ধন শরিক সিপিআইএমএল-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, ‘কংগ্রেসের খারাপ ফলের জন্য দায়ী ভুল প্রার্থী নির্বাচন এবং প্রচারে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ না করা। নিজেদের খামতিগুলি তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।’
নির্বাচন পরবর্তী আচরণে মহাজোটের ভিতরে এর মধ্যেই ভাঙনের আভাস দেখা দিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, আরজেডি-র সঙ্গে কংগ্রেসের মধুচন্দ্রিমার মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে। বিশে, করে বিধানসভায় ৭৫টি আসন জেতার পরে সনিয়া-রাহুলদের যে বিশেষ পাত্তা দিতে রাজি নয় লালুপ্রসাদ যাদবের দল, তাক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।