গতকাল কানাডার সংসদে দাঁড়িয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেছিলেন, খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার ঘটনায় 'ভারতের সম্ভাব্য যোগের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ' রয়েছে। এই আবহে নিজ্জরের হত্যার ইস্যুটি নিয়ে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত ঘনিষ্ঠ দেশগুলিকে জানিয়েছে কানাডা। এই ইস্যুতে ব্রিটেন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি সরাসরি। তবে আমেরিকার তরফে এই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকশ করা হয়েছে। এই নিয়ে হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, 'আজকে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগগুলো করেছেন তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা কানাডার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কানাডার তদন্ত এগোচ্ছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।' (আরও পড়ুন: 'সবার ওপরে দেশ', কানাডায় খলিস্তানি হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে মোদী সরকারের পাশে কংগ্রেস)
প্রসঙ্গত, খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার ঘটনা নিয়ে গতকাল কানাডার সংসদে জাস্টিন ট্রুডো বলেছিলেন, 'কানাডিয়ান নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের মৃত্যু নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তদন্ত চালাচ্ছে দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। এই ঘটনায় ভারত সরকারের এজেন্টদের যোগ থাকার সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। কানাডায় আইনের শাসন চলে। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার।'
আরও পড়ুন: ট্রুডোকে শিক্ষা দিতে কড়া পদক্ষেপ ভারতের, দেশ ছাড়তে নির্দেশ কানাডার কূটনীতিককে
এর আগে সম্প্রতি জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফরে এসে খলিস্তান ইস্যুতে মোদীর কাছে কথা শুনতে হয়েছিল কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে। এদিকে ঘরোয়া রাজনীতির সমীকরণের কথা মাথায় রেখে নিজের আগের অবস্থানেই অনড় থেকেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। আর এরই মাঝে খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জারের খুনের সঙ্গে ভারতীয় সরকারি এজেন্টের যোগ আছে বলে দাবি করেন জাস্টিন ট্রুডো। এই নিয়ে নাকি কানাডা সরকার নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকারের কাছে। এদিকে জানা যায়, দিল্লি সফরকালে খলিস্তানি ইস্যু নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেইসঙ্গে যাতে কানাডায় ভারতীয় দূতবাসের আধিকারিকদের উপর হামলা, প্রবাসী ভারতীয়দের হুমকি এবং মন্দিরের উপর হামলার মতো ঘটনায় ইতি টানা যায়, তা নিশ্চিত করতে ট্রুডোকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছিলেন মোদী। তবে মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর খলিস্তানি ইস্যুতে নিজের আগের অবস্থানেই থাকেন ট্রুডো।
আরও পড়ুন: মাথার দাম ১০ লাখ, ৪টি মামলা NIA-র, ভারত-কানাডা সম্পর্কে চিড় ধরানো খলিস্তানি কে?
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক মাস ধরেই কানাডায় ভারত বিরোধী শক্তি বেশি করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। খলিস্তানি আন্দোলনের নামে মন্দিরে মন্দিরে হামলা হয়েছে। এদিকে কানাডা সরকারকে এই নিয়ে বারবার সতর্ক করলেও ঘরোয়া রাজনীতির স্বার্থে এই নিয়ে নীরবতা পালন করেছেন জাস্টিন ট্রুডো। তবে দিল্লিতে জি২০ বৈঠকের পর মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই নিয়ে কথা শুনতে হয় তাঁকে। অবশ্য তিনি তাঁর সরকারের সেই পুরনো অবস্থানের কথাই জানিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর দেশে ফিরে খলিস্তানি জঙ্গি হত্যার ঘটনায় সরাসরি ভারতের যোগ থাকার অভিযোগ করলেন তিনি।
এদিকে নিজ্জর হত্যা মামলায় ভারত যোগ নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। এক বিবৃতি প্রকাশ করে ভারত বলে, কানাডার মাটিতে যে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চলছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। কানাডা সরকারের উচিত সেই সব কার্যকলাপ বন্ধ করা। এবং কানাডায় এমনিতেই হত্যা এবং অন্যান্য সংগঠিত অপরাধ ঘটেই থাকে। এই আবহে কোনও হত্যার সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা অমূলক। খলিস্তানিদের বাড়বাড়ন্ত থেকে নজর ঘোরাতেই এটা করা হচ্ছে।