কৃষকদের প্রতিবাদে হরিয়ানা সরকারের প্রতিক্রিয়ার তীব্র বিরোধিতা করলেন উন্নয়নমূলক অর্থনীতিবিদ এবং কৃষি বিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনের কন্যা, মধুরা স্বামীনাথন। স্বামীনাথন কন্যার কথায়, ভারতীয় কৃষকরা 'আমাদের অন্নদাতা' এবং তাঁদের সঙ্গে তো এইভাবে অপরাধীর মতো আচরণ করা যায় না।
দিল্লির পুসায় ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএআরআই) সম্প্রতি তাঁর বাবাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদান করার জন্য একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে, মধুরা বলেছিলেন যে এমএস স্বামীনাথনকে সত্যিই হৃদয় থেকে সম্মান জানানোর জন্য, কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে হবে। মধুরার কথায়, পঞ্জাবের কৃষকরা দিল্লির দিকে মিছিল করছে। তিনি বিশ্বাস করেন, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, হরিয়ানায় তাঁদের জন্য জেল তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে ব্যারিকেড রয়েছে, তাঁদের ঠেকানোর জন্য সব ধরনের কাজ করা হচ্ছে। এঁরা কৃষক, এঁরা অপরাধী নন।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একটি দলের সঙ্গে অমীমাংসিত আলোচনার পরে, কৃষকরা মঙ্গলবার দিল্লির দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। দিল্লিতে এগিয়ে যাওয়াই হল, দেশের সমস্ত কৃষকদের হয়ে সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা (অ-রাজনৈতিক) এবং কিষাণ মজদুর মোর্চার সংকল্প। তাঁদের অভিযোগের সমাধানের জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের (এমএসপি) আইনি নিশ্চয়তা, স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, কৃষক ও খেতমজুরদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা, কৃষি ঋণ মাফ, পুলিশি মামলার নিষ্পত্তি, ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার সহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা। এরই পাশাপাশি লখিমপুর খেরি সহিংসতা, জমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৩ পুনরুদ্ধার, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার, পূর্বের বিক্ষোভ থেকে মৃত কৃষকদের পরিবারগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ এবং আরও অনেক কিছু নিয়েও সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গেই কথা বলতে গিয়ে মধুরা স্বামীনাথন আরও যোগ করেছেন, 'ভারতের নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানীদের, আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি, আমাদের অন্নদাতাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, আমরা তাঁদের সঙ্গে অপরাধীর মতো ব্যবহার করতে পারি না। আমাদের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এই আমার অনুরোধ। আমি মনে করি যদি আমাদের এগিয়ে যেতে হয় এবং সত্যিই এমএস স্বামীনাথনকে সম্মান জানাতে হয় তবে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য যে কৌশল নিয়েই পরিকল্পনা করা হোক না কেন আমাদের সঙ্গে কৃষকদের সমান অধিকার দিতে হবে।'
সম্প্রতি, এক্স-এর একটি পোস্টে, মধুরা ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে এমএস স্বামীনাথনের প্রকাশিত একটি বিবৃতি শেয়ার করেছেন। এই বিবৃতিতে তিনি তাঁর তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। বিবৃতিতে লেখা ছিল, 'আজকের ঘোষণায় আমি খুশি। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে C২+৫০ শতাংশ হল কৃষকদের জাতীয় কমিশনের রিপোর্টের মূল অংশ। আমরা উৎপাদন, সংগ্রহ এবং দামের ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তার উপর আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। এগুলো একযোগে দেখা উচিত।'
IARI-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর আরবি সিং-এর মতে, এমএস স্বামীনাথন ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (MSP) প্রণয়ন করেছিলেন এবং এর বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়ভাবে সমর্থনও করেছিলেন। এমএস স্বামীনাথনের সঙ্গে নিজের স্মৃতি স্মরণ করে, সিং বলেছিলেন, একজন দরিদ্র-সমর্থক ছিলেন স্বামীনাথন। নারী ও প্রকৃতি-পন্থী দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাস করতেন ডঃ স্বামীনাথন। মধুরা ছাড়াও এমএস স্বামীনাথনের কন্যা তথা ডব্লিউএইচওর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথনও এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, ভারতে সবুজ বিপ্লবের স্থপতি হিসাবে বিবেচিত, এমএস স্বামীনাথন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ৯৮ বছর বয়সে মারা যান।