২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ানে সংঘর্ষ বেঁধেছিল ভারত ও চিনা সেনার। এরপরও আরও দু'বার নাকি চিনা সেনার সঙ্গে ভারতীয় সেনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এই তথ্য সম্প্রতি সামনে এসেছে। এর আগে পর্যন্ত এই সংঘর্ষগুলির বিষয়ে সরকারের তরফে কোনও তথ্যই জনসমক্ষে পেশ করা হয়নি। তবে এই সংঘর্ষের কথা সামনে আসার পরই ফের পুরনো রেকর্ড বাজাতে শুরু করল চিন। বেজিং দাবি করল, 'সার্বিক ভাবে বিগত দিনে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।' যদিও ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে, সীমান্ত সমস্যা না মেটা পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। আদতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজা রাখার খাতিরেই চিন বারবার দাবি করে আসছে, সব স্বাভাবিক আছে। তবে তাদের এই গরজে সাড়া দিচ্ছে না ভারত। বরং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর পক্ষে দিল্লি। (আরও পড়ুন: একদিকে চাষীদের আর্থিক সহায়তা, অন্যদিকে কৃষকদের ওপর কর বসানোর ভাবনা!)
আরও পড়ুন: ভারতে বেতন না দেওয়ার অভিযোগ, ইউরোপে সবচেয়ে বেশি চাকরি দিল সেই IT সংস্থাই
এই আবহে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বললেন, 'চিন বিশ্বাস করে যে চিন-ভারত সীমান্ত ইস্যুটি আদতে একটি ঐতিহাসিক ইস্যু। এই আবহে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধাঁচে ফেলে তা মেটানো উচিত।' উল্লেখ্য, এর আগে ড্যাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে এক ভারতীয় আধিকারিক মন্তব্য করেছিলেন, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটলে চিনের জন্য ভারতের বিনিয়োগের নিয়ম বদলে যেতে পারে। আর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই চিন বোঝাতে চাইছে, সব কিছু স্বাভাবিকই আছে। অর্থনৈতিক ভাবে চিন বিগত কয়েকটি ত্রৈমাসিকে ধুকছে। এই আবহে তাদের ব্যবসা চাই। আর তাই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আগের জায়গায় নিয়ে যেতে মরিয়া তারা। এদিকে সীমান্তে যে এলাকা চিন দখল করে বসে আছে, তাও ছাড়তে তারা নারাজ। এই আবহে যদি চিনের কথা মতো ভারত মেনে নেয় যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তাহলে সেই দখ হওয়া অঞ্চল চিরতরে চিনা দখলেই থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার মধ্যে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বক্তব্য, 'চিন-ভারত সীমান্তে মোটের ওপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সেখানকার সমস্যা মেটানোর প্রক্রিয়ার কারণে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আঁচ পড়া উচিত নয়।'
আরও পড়ুন: গতবছরই মিলেছিল DGCA-র ছাড়পত্র, তাও বিশ বাঁও জলে জেটের আকাশে ওড়ার পরিকল্পনা!
এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, গালওয়ান সংঘর্ষের পর আরও অন্তত দু'বার ভারত ও চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে বিগত এই কয়েক বছরে। এই তথ্য সামনে এসেছে সেনা জওয়ানদের বীরত্বের পুরস্কার প্রদানের থেকে। সম্প্রতি ভারতীয় সেনার পশ্চিম কমান্ডে এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি সামনে আসে। তবে এই সংক্রান্ত পুরো তথ্য জানা যায়নি এখনও। শুধু এটুকুই জানা গিয়েছে, আগ্রাসী চিনা সেনাকে ভারতীয় জওয়ানরা রুখে দিয়েছিলেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৩ জানুয়ারি সেনার ওয়েস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর চণ্ডীমন্দিরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে বীরত্বের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছিল সেনা জওয়ানদের। সেই অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো সেনার তরফ থেকে ইউটিউবেও আপলোড করা হয়েছিল। সেখানে পুরস্কার প্রদানের সময় সংক্ষিপ্ত ভাবে ভারত-চিন সংঘর্ষের বিবরণ পড়ে শোনানো হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে সেই চ্যানেলটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বদলে যাচ্ছে এনপিএস-এর নিয়ম, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে হবে কার্যকর
রিপোর্ট অনুযায়ী, গালওয়ানের সংঘর্ষের পর আরও যে দু'টি সংঘর্ষ হয়েছিল, সেগুলি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে কোনও এক সময়ে হয়েছিল। উল্লেখ্য, গালওয়ান সংঘর্ষের আগে থেকেই সীমান্ত নিয়ে চিনা সেনার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। তবে তাতে কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি। বরং চিনা সেনা সুযোগ বুঝে বারবারই আগ্রাসন দেখিয়েছে। শুধু লাদাখ নয়, উত্তরপূর্বে অরুণাচলের তাওয়াং সেক্টরেও স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করেছে চিন। এর আগে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়াঙে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল চিনা সেনা। ভারতীয় জওয়ানরা চিনা সেনার সেই আগ্রাসনকে রুখে দিয়েছিল। সেই ক্ষেত্রেও সাহসী সৈনিকদের তাঁদের বীরত্বের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সেই সময় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছিলেন, ইয়াংসে অঞ্চলে চিন একক ভাবে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল। তবে ভারতীয় সেনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে চিনা সেনাকে রুখে দিয়েছিল। সেই সংঘর্ষে দুই দেশেরই জওয়ানরা জখম হয়েছিলেন।
তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে যে দু'বার ভারত ও চিনা সেনা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল, সেই বিষয়টি এই প্রথমবার সামনে এসেছে সেনারই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তবে এই বিষয়ে সেনা বা সরকারের তরফ থেকে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি এখনও। পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠানের যে ভিডিয়োটি সেনার তরফ থেকে আপলোড করা হয়েছিল, সেটিও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। এই আবহে এই দুই সংঘর্ষ ঘিরে জল্পনা বাড়ছে।