দেবব্রত মোহান্তি
ওড়িশার করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা। দেশের নানা পরিবারকে কার্যত শেষ করে দিয়েছে। সব থেকে বড় কথা বাংলা, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, অসম থেকে প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক এই ট্রেনে চেপেই মূলত দক্ষিণভারতে যান। সবটাই পেটের টানে। এই ট্রেন দুর্ঘটনা কার্যত ছারখার করে দিয়েছে সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারগুলিকে।
সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৮৮জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। আহত হয়েছিলেন অন্তত ১২০০জন। হয়তো অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। কিন্তু তাদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। এই যেমন ২২ বছর বয়সি প্রকাশ রাম। বাড়ি বিহারের গোপালগঞ্জে। রেল দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছেন তিনি। কীভাবে বাকি জীবনটা তিনি চালাবেন তা কিছুতেই ভাবতে পারছেন না।
অন্ধ্রপ্রদেশে একটি সেরামিক টাইলসের কারখানায় কাজ করতেন তিনি। যশবন্তপুর হাওড়া এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু পথেই নেমে এল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রথমে তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। পরে তিনি দেখেন কটকের একটা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁর একটি পা কেটে বাদ দেন। এতটাই জখম হয়েছিল সেই পা-টি।
হাসপাতালের বেডে শুয়েছিলেন রাম। দুচোখে হতাশা। তিনি বলেন, বুঝতে পারছি না এরপর কী হবে। পরিবারে আমি একমাত্র উপার্জনশীল মানুষ। এরপর কীভাবে সংসার চলবে? হয়তো বিহার ছাড়তে হবে আমায়। এই একটা পা নিয়ে এবার কী করে সংসার চালাব আমি? প্রশ্ন ওই পরিযায়ী শ্রমিকের।
এই রামের মতো পরিণতি হয়েছে অনেকেরই। বাংলা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁরা দক্ষিণভারতে যাচ্ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে। একটু সুখের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেনারেল বগির মেঝেতে বসে তাঁরা কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশে যান। কিন্তু সেই সুখের আশাটাও কেড়ে নিল ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা।
মুর্শিদাবাদের ২৫ বছর বয়সি রেজাউল বাফাদার কেরলে মিস্ত্রির কাজ করেন। তার হাতে মারাত্মক চোট। অন্তত একবছর তিনি কাজ করতে পারবেন না। চারদিন আইসিইউতে ছিলেন তিনি। রেজাউল বলেন, সরকার যে ২ লাখ টাকা দিচ্ছে তাতে কতদিন চলবে। কিন্তু কাজে ফিরবই বা কীভাবে?
পুরুলিয়ার বাসিন্দা সৃষ্টিধর সবক জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশের রাজমিস্ত্রির কাজ করি। তাঁর বাঁ পা ভেঙে গিয়েছে। তিনি জানেন না কবে আবার কাজে ফিরতে পারবেন। তিনি বলেন, কাজে গেলে রোজ ৫০০ টাকা করে পেতাম। কাজে না গেলে সংসারটা কীভাবে চলবে? ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে এই হাহাকার। তাঁদের প্রশ্ন এবার সংসারটা কীভাবে চলবে?