করোনার প্রকোপ রুখতে সমস্ত ভিনরাজ্য থেকে ভিটেতে ফেরা শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। কিন্তু তার জেরে একেবারে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাসায়নিক দিয়ে চান করিয়ে দেওয়া হবে, তা কে জানত। এই ভিডিও ভাইরাল হতেই হইহই পড়ে যায়। বরেলিতে এই ঘটনার নেপথ্য কিছু অতুত্সাহী কর্মী বলে জানিয়েছে স্থানীয়
প্রশাসন। ভিডিওয়ে দেখা যায়, মাটিতে বসে আছে দরিদ্র শ্রমিকরা ও তাদের ওপর স্প্রে ছিটিয়ে দিচ্ছেন কর্মীরা। এমনকী বাচ্চারাও বাদ যায় নি এই শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া থেকে। রাস্তার ধারে বরেলির স্যাটেলাইট বাস স্ট্যান্ডের কাছে হওয়া এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আগুনের গতিতে ছড়ায়। প্রত্যেকের মনেই প্রশ্ন, এরকম অমানবিক আচরণ কী করে করা সম্ভব।
ঘটনায় অবশ্য তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের। তিনি বলেন যে ভিডিওটি তাঁর দেখা হয়ে ওঠা হয়নি। বরেলিতে প্রত্যকে যারা আসছে তাদের সরকারি নির্দেশ মোতাবেক স্যানিটাইজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। নির্দেশ মোতাবেকই কর্মীরা কাজ করছে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কিন্তু এরপরেও বিতর্ক চাপা পড়েনি। পরে ডিএম বলেন যে তারা ভিডিওটি দেখেছেন। বরেলি নগর নিগম ও ফায়ার ব্রিগেডকে বাসগুলিকে স্যানিটাইজ করতে বলা হয়েছিল। অতি উত্সাহে একেবারে শ্রমিকদের ওপর রাসায়নিক ছিটিয়ে দেয় তারা। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানান ডিএম। আক্রান্তদের চিকিত্সা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
করোনার জন্য বরেলিতে নিযুক্ত নোডাল অফিসার অশোক গৌতম বলেছেন ওটা ক্লোরিন মিশ্রিত জল, রাসায়নিক মিশ্রণ নয়। মজদুরদের স্প্রে করার সময় চোখ বন্ধ করে রাখতে বলা হয়েছিল বলে জানান গৌতম।
তবে এই স্প্রে করার সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলে দাবি করেছেন গৌতম। তাঁর দাবি, রোগ যাতে না ছড়ায়, সে জন্যেই স্প্রে করা হয়েছে। জামা কাপড়ে যদি ভাইরাস থাকে, ক্লোরিন জলে চান করলে তা নির্মূল হয়ে যাবে বলে দাবি করেন আধিকারিক।
জিনিসপত্র, মেঝে, জামা-কাপড় সাফ করার জন্য ক্লোরিন, ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মানুষের শরীরে দিলে চামড়া পুড়ে যেতে পারে, প্রচন্ড চুলকানি হতে পারে।
বরেলি প্রশাসনের এরকম কাজের কড়া নিন্দা করেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি বলেছেন যে শ্রমিকরা অনেক পরিশ্রম করেছে, সেখানে তাদের রাসায়নিকে চান করানো উচিত নয়। এতে ওদের শরীর খারাপ হয়ে যাবে।
বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন এটি নিষ্ঠুর ও অমানবিক। শ্রমিকদের সুবিধার্থে কয়েকটা ট্রেন চালালে তার সহজেই বাড়ি ফিরতে পারত বলে রায় তাঁর। গত তিন-চারদিনে লক্ষাধিক ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা উত্তরপ্রেদেশে নিজেদের ভিটেতে ফিরেছেন। কেবল বরেলিতেই ২৫ হাজার শ্রমিক ফিরে এসেছেন। তাদের করোনামুক্ত রাখতে গিয়েই এই কীর্তি।