পণের জন্য খুন প্রমাণ করে, সমাজে এখনও মেয়েদের আর্থিক বোঝা হিসাবে মনে করা হয়। এই ধরনের মৃত্যু মনে করিয়ে দেয়, সমাজে মানসিকতার এখনও বদল হয়নি। এক মামলার পর্যবেক্ষণে এই মন্তব্য করল দিল্লি হাই কোর্ট।
মামলায় বিচারপতি স্বরানা কান্ত শর্মা বলেন, আরও অস্বস্তিকর বিষয় হল, পণের জন্য খুন শুধুমাত্র পুরুষের অধিপত্যের কারণে হয় না বরং নারীরাও তাদের প্রতিপক্ষের প্রতি শত্রুতা দেখাতে গিয়ে এতে মদত দেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলে,'এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে যেটা অস্বস্তিকর তা হল, বিষয়টি শুধুমাত্র পুরুষ অধিপত্যবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এই সব ঘটনায় একটি জটিল মোড় থাকে। যেখানে মহিলারা তার প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতে এই ধরনের কাজে অংশ নেয়। পণের দাবিতে খুনের মামলাগুলি প্রমাণ করে, মেয়েদের আসলে আর্থিক বোঝা হিসাবে দেখা হয়। জন্ম সময় থেকেই তাঁর বিবাহের খরচের বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়। সেই ভাবনা, তাদের শিক্ষা এবং স্বর্নিভর হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ছাপিয়ে যায়।'
আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, শ্বশুর বাড়িতে মহিলার কাছে বারবার পণের টাকা আনার জন্য চাপ দেওয়া তাঁর উপর মানসিক চাপ তৈরি করে। পণের জন্য তাঁকে ক্রীতদাসের মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য করা শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও ক্ষতিকর হতে পারে।
আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, 'এই ধরণের মৃত্যুর ক্ষেত্রে মেয়েটির পরিবারের লোকজনের থেকে জানতে পারা যায়, কী ধরনের মানসিক অত্যাচার করা হয়ে থাকে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে টাকা আনতে বাধ্য করার জন্য। বিয়ে হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বাপের বাড়ি থেকে মূল্যবান সামগ্রী, টাকা আনতে বলা হয়। এমন ভাবে বিষয়টি রাখা হয়, ছেলেটির পরিবারের এটা অধিকার এবং মেয়েটির বাবা-মা তা পালন করতে বাধ্য।'
আদালত আরও বলে, মানসিক অত্যাচার এমন পর্যায়ে চলে যায় যে মেয়েটির তখন মৃত্যুকে কম যন্ত্রণাদায়ক বলে মনে হয়।
২০০০ সালে স্ত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া এবং পণ নেওয়ার অভিযোগ দোষী সাব্যস্ত হন সতপাল সিং। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে যান তিনি। সেই মামলাতেই আদালত তার পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। নিম্ন আদালত তাঁকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল।
এই মামলায় বিচারপতি শর্মা বলেন, মহিলাকে নিরলস যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল এমন কী তাঁর বাবা-মা সঙ্গে তাঁকে দেখা করারও অনুমতি দেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়কেই বহাল রেখেছে।