জেমি মাল্লিক
যে চারটি রাজ্য আগামী দিনে কোভিড স্পট হিসাবে দেখা যেতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল পশ্চিমবঙ্গ। এছাড়াও আছে কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহার। মূলত তিনটি প্রতিকুল ফ্যাক্টরের জন্যেই এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের বিশ্লেষণ করা তথ্যে এই কথাই উঠে আসছে।
এই তিনটি ফ্যাক্টর হল কেস পজিটিভিটি রেট, নয়া কেসের বৃদ্ধি ও টেস্ট প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যার জন্য। সারা বিশ্ব জুড়েই গ্লোবাল হটস্পটে এই ফ্যাক্টর গুলির সবকটি বা কম করে দুটি থাকে। ভারতে প্রথম চার মাসে যে তিনটি হটস্পট হয়েছিল সেই দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও তামিল নাড়ুতেও ছিল এই ফ্যাক্টরের প্রভাব। অর্থাৎ কেস পজিটিভি রেট খুব বেশি হওয়া, কম টেস্ট হওয়া ও দ্রুত কেসের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়া-এই ফ্যাক্টরগুলি কাজ করেছিল এখানে।
এরমধ্যে তিনটি মাপকাঠিতেই উন্নতি করেছে দিল্লি। টেস্টিং বাড়লেও অন্য দুটি ফ্যাক্টরে এখনও পিছিয়ে মহারাষ্ট্র ও তামিল নাড়ু।
কেস দ্বিগুণ হওয়ার দিন
এই মুহূর্তে দেশে এই মাপকাঠিতে সবচেয়ে খারাপ অন্ধ্র (৭ দিন), কেরালা (১১ দিন) ও কর্নাটক ( ১১.৫ দিন)। গত এক মাসে পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়েছে এই তিন রাজ্যে। অর্থাৎ দ্রুত রোগীর সংখ্যা দিগুণ হচ্ছে, জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক দ্রুত।
ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারেও আগের চেয়ে অনেক দ্রুত কেসের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। শেষ এক মাসে শুধু পাঁচটি রাজ্যে কেসের দ্বিগুণ হওয়ার রেট বেড়েছে-সেগুলি হল দিল্লি, তেলেঙ্গানা, হরিয়ানা, তামিল নাড়ু ও উত্তরপ্রদেশ। এর মধ্যে শুধু চমকপ্রদ ফলাফল দিল্লির-এক সময় ১৩ দিন থেকে এখন সেটি ৭৬.৬ দিন হয়ে গিয়েছে।
পজিটিভি রেটে বৃদ্ধি-
দেশের ২০টির মধ্যে ১৫টি রাজ্যে, পজিটিভিটি রেট-অর্থাৎ টেস্ট করলে যতজন করোনা পজিটিভ, সেই হার বেড়েছে গত মাসে। মহারাষ্ট্রে এখনও পজিটিভি রেট ২১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে কর্নাটক ( ১৬.৭ শতাংশ), তৃতীয় স্থানে বাংলা ( ১৬.৯ শতাংশ)। গত মাসে বাংলায় পজিটিভিটি রেট ছড়াচ্ছিল ১১.৯ শতাংশ। এতেই বোঝা যাচ্ছে যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে রাজ্যে। অন্ধ্র প্রদেশে পজিটিভি রেট ২.২ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ হয়ে গিয়েছে।
সারা দেশে পজিটিভিটি রেট ৮.৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২০০ জনকে পরীক্ষা করে ১৭ জন করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছেন। গত এক মাসে শুধু তেলেঙ্গানা ও দিল্লিতে পজিটিভি রেট অনেকটা কমেছে।
টেস্টিংয়ের হার-
'টেস্টিং নিয়ে প্রথম থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শুধরোলেও অন্য জায়গায় যেখানে টেস্টিং বহুগুণ বেড়েছে, সেটা হয়নি রাজ্যে। এই মুহূর্তে প্রতি দশ লক্ষ মানুষে দেশে গড়ে ১২,২২২ জনের টেস্ট হয়েছে। সেখানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিহারের ( ৩৬৯৯ টেস্ট প্রতি ১০ লক্ষে)। এছাড়াও নিচের দিক থেকে পাঁচটি স্থানে আছে ঝাড়খণ্ড ( ৬৭৭৫), উত্তরপ্রদেশ ( ৭৮৩৪), পশ্চিমবঙ্গ ( ৮১৪৩) ও মধ্যপ্রদেশ ( ৮৩২৩)।
সবমিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এই তিন ফ্যাক্টরেই জাতীয় গড়ের চেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে। টেস্টিং বাড়াতে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন লকডাউন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আরো ঘোরালো না হয়, তার জন্য দ্রুত কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে রাজ্য সরকার, তার ওপরেই নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য।