শুধুমাত্র কাগজের নথি ঘিরে নি সন্দেহের বশে কোনও ভারতীয় নাগরিককে বিদেশী বলে ঘোষণা করা যাবে না। মঙ্গলবার এই বক্তব্য উঠে আসে গুয়াহাটি হাইকোর্টের তরফে। বিচারপতি কোটিশ্বর সিং ও মালাশ্রী নন্দীর বেঞ্চে একটি মামলার শুনানি চলছিল। সেই সময়ই সাফ বার্তায় আদালত ওই বক্তব্য জানায়। উল্লেখ্য, জনৈক ফরিদা বেগমের এক মামলায় এই বক্তব্য উঠে আসে। উল্লেখ্য, এনআরসি ইস্যুতে এককালে তপ্ত হওয়া অসমে হাইকোর্টের এই রায় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
ফরেন ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় ফরিদা বেগমের দাবি, তাঁর বাসস্থান সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাইয়ের অভাবে তাঁকে বিদেশী আখ্যা দিয়েছে ফরেন ট্রাইবুনাল। এই মামলার প্রেক্ষিতে গুয়াহাটি হাইকোর্ট জানিয়েছে, কেবলমাত্র এই ভিত্তিতে একজনকে বিদেশী আখ্যা দেওয়া যাবে না। এদিকে, বাসস্থান সংক্রান্ত নথি ছাড়া, ফরিদা বেগমের কাছে থাকা বাকি নথিতে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ রয়েছে। অন্যদিকে, অভিযুক্তের শিবির থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগকারীর স্কুল রেকর্ডে যে নাম রয়েছে, তা তাঁর ডাকনাম। আর তা ভোটার কার্ডের নামের সঙ্গে মিলছে না। আর সে কারণেই তাঁকে 'বিদেশী' আখ্যা দেওয়া হয়। আদালত নিজের রায়ে জানিয়েছেন, কাউকে বিদেশী তকমা দেওয়ার আগে, নাগরিকত্বকে সমর্থনকারী নথির সত্যতা যাচাই রাষ্ট্রের কর্তব্য। এই প্রসঙ্গে হাইকোর্ট জানিয়েছে, এমন বহু মামলা তাদের কাছে আসছে, যেখানে ফরেন ট্রাইবুনাল ও সরকারের কর্মপদ্ধতি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, 'যেখানে অভিযোগকারী বলছেন তিনি নথি পেশ করেছেন অথচ তাঁকে বিদেশী ঘোষণা করা হয়েছে, এমন মামলার তদন্তগুলি নিয়ে আমরা বিরক্ত।'
উল্লেখ্য, এই ইস্যুতে অন্যতম বড় মামলা চন্দ্রধর দাসের। ১০২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি নাগরিকত্বের টানাপোড়েনে জড়িয়েগিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত তিনি বিনা নাগরিকত্বের তকমা নিয়েই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। ২০১৮ সালে তাঁকে ফরেন ট্রাইবুনাল বিদেশী তকমা দেয়। এরপর এই ১০২ বছরের বৃদ্ধ ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিলেন ৩ মাস। এমনই তথ্য উঠে আসছে। ১৯৫৬ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরাতে আসেন। এদিকে, তাঁর নাগরিকত্বের মামলা চলাকালীন ত্রিপুরাতে তাঁর নথি পাঠিয়ে তা যাচাইয়ের কথা বলা হয়। তবে যাচাই পর্ব শেষ হওয়ার আগেই কিনি মারা যান। এই করুণ ঘটনা সহ নাগরিকত্ব ইস্যুতে একাধিক মামলা নিয়ে মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। আর সেই প্রেক্ষাপটেই এদিন গুয়াহাটি হাইকোর্টের রায় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এনআরসি ইস্যুতে যখন অসমের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একাধিক ঝড় বয়ে যায়, তখন আদালতের এই বক্তব্য প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন অনেকেই।