গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজরায়ে হামাসের হামলার পর থেকেই একের পর এক যৌন অত্যাচারের ঘটনা উঠে এসেছে। এই আবহে হামাস জঙ্গিদের যৌন অপরাধ নিয়ে বিগত দুই মাস ধরে 'তদন্ত' চালায় মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। আর সেই তদন্ত শেষে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট পেশ করেছে তারা। আর তাতেই হতবাক গোটা বিশ্ব। সেই রিপোর্টে এক প্রতক্ষ্যদর্শীকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেই মহিলা সংবাদপত্রকে জানান, হামলার দিন (৭ অক্টোবর) তিনি একজন তরুণীকে ধর্ষিত হতে দেখেছিলেন। তিনি দাবি করেন, হামাস জঙ্গিরা সেই তরুণীকে ধর্ষণ করেই থেমে থাকেনি। তাঁর স্তনগুলি কেটে আলাদা করে তা নিয়ে বলের মত লোফালুফি খেলছিল তারা। একটা সময়ে সেই স্তন বা মাংসপিণ্ড মাটিতে পড়ে যায়। এদিকে এই গোটা সময় রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাতে থাকা সেই তরুণীকে ধর্ষণ চালিয়ে যায় হামাসের জঙ্গিরা। (আরও পড়ুন: দশম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে 'রোম্যান্টিক শুট', শিক্ষিকা বললেন, 'আমাদের সম্পর্ক...')
এদিকে এই রিপোর্টে সামনে এসেছে গাল আবদুশ নামক এক নির্যাতিতার ঘটনাও। দুই সন্তানের মা গাল আবদুশের দেহ অর্ধনগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল রাস্তার ধারে। তাঁর আর্ধেক মুখ পুড়ে গিয়েছিল। এদিকে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ১৫০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে অনেক বিভীষিকাময় কাহিনী তাদের সামনে এসেছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, হামাসের হামলার পর ইজরায়েলে এক মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, যাঁর যৌনাঙ্গের কাছে পেরেক পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। জঙ্গিরা এই মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল বলে অনুমান করা হয়। এই ধরনেরই বিকৃত অবস্থায় অন্তত ৩০ জন মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয় বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। ইজরায়েলে ধ্বংসলীলা চালানোর পর অনেক ইজরায়েলিকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। এদিকে হামাস প্রথম থেকেই যৌন নিগ্রহের কোনও ঘটনার সঙ্গে যোগ থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে।
এদিকে সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবেশী মিশর ফের একবার বন্দি বিনিময়ের লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে উভয় পক্ষের সঙ্গে। এদিকে এখনও পর্যন্ত এই যুদ্ধে ২০ হাজার গাজাবাসীর মৃত্যু ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এরই মাঝে বড়দিনেই ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, গাজায় হামলা আরও জোরদার করা হবে। গাজায় যে ভূগর্ভস্থ টানেলের নেটওয়ার্ক পাওয়া গিয়েছে, তা জলে ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। যদিও ইজরায়েলের এই পরিকল্পনাকে 'গণহত্যার পরিকল্পনা' বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর আচমকাই ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। শ'য়ে শ'য়ে ইজরায়েলিকে খুন করে হামাস জঙ্গিরা। শতাধিক সাধারণ নাগরিক এবং বিদেশিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামাস। জবাবে গাজায় গোলাবর্ষণ শুরু করে ইজরায়েল। পরে গাজায় প্রবেশ করে ইজরায়েলি সেনা। সেই সংঘর্ষ এখনও জারি রয়েছে। এরই মাঝে কয়েক দফায় বন্দি মুক্তি হয় দুই তরফ থেকেই। অনেক বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইজরায়েলও অনেক প্যালেস্তিনীয়কে ছেড়ে দিয়েছে এর বদলে। তবে এখন বন্দি বিনিময় বন্ধ হয়েছে। ফের চলছে যুদ্ধ।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর সকাল সকাল হাজার হাজার রকেট গাজা ভূখণ্ড থেকে উড়ে এসেছিল দক্ষিণ ইজরায়েলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ইজরায়েলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। হামাস জঙ্গিরা সীমান্তের বেড়া কেটে ইজরায়েলে ঢুকে পড়ে। অমানবিক তাণ্ডব চালায় তারা। সাধারণ মানুষকে বাড়িতে ঢুকে ঢুকে খুন করে হামাসের বন্দুকবাজরা। সঙ্গে অনেককেই অপহরণ করে তারা। এরপর ইজরায়েলও পালটা জবাবি হামলা চালায়। শুরু হয় যুদ্ধ। কয়েক হাজার প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে তাতে। গাজায় যা পরিস্থিতি, তাতে সবথেকে বেশি ভুক্তভোগী সাধারণ নিরপরাধ প্যালেস্তিনীয়রা। গাজায় ২৩ লাখের বাস। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে প্যালেস্তাইন অথোরিটির থেকে গাজা ভূখণ্ডের ক্ষমতা জোর করে ছিনিয়ে নিয়েছিল হামাস। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত নয় তাদের সেই সরকার। তবে আক্ষরিক অর্থে গাজার প্রশাসন তাদেরই হাতে। আর এই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে ইজরায়েল। তবে এই যুদ্ধে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের।