বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরিয়ে নীতীশ কুমার ফিরেছেন এনডিএ-তে। এই আবহে বিরোধী জোটে অস্বস্তি বেড়েছে। বাংলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'একলা চলো'র সুর তুলেছেন। পঞ্জাবেও আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাবেন না তিনি। এরই মাঝে নীতীশ সরাসরি বিরোধী শিবির ছেড়ে এনডিএ-তে যোগ দিলেন। তবে নীতীশের এই ডিগবাজিতে জোটের ওপর বাজে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করছেন বিরোধীরা। নীতীশ গতকাল মহাজোটের সরকার ভেঙে দেওয়ার পরই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বিরক্তি না লুকিয়ে বলেন, 'এটা যে হে, তা জানা ছিল।' পাশাপাশি নীতীশকে 'আয়ারাম গয়ারাম' বলেও কটাক্ষ করেন খাড়গে। এদিকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, রাজনীতিতে গিরগিটিদের মতো বড় নেতা নীতীশ কুমার। নীতীশজি ইন্ডিয়া জোটের প্রথম বৈঠক ডেকেছিলেন। পরের দুটি বৈঠকেও ছিলেন। এবার উনি যেটা করলেন সেটা অপ্রত্যাশিত। বিজেপির নাটকে সামিল হয়ে গেলেন নীতীশ কুমার। (আরও পড়ুন: মমতার জন্যেই ইন্ডিয়া ছেড়েছেন নীতীশ, 'ষড়যন্ত্রের' তত্ত্ব খাড়া করে বিস্ফোরক JDU)
এদিকে এনসিপি প্রতিষ্ঠাতা শরদ পাওয়ারও কটাক্ষের সুরে নীতীশকে 'দ্য গ্রেট পালটু রাম' বলে আখ্যা দিয়েছেন। এদিকে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং এনসিপির জোট সঙ্গী উদ্ধবপন্থী শিবসেনা বলে, 'বিজেপির নেতৃত্বে দেশে রাম রাজ্য স্থাপন হচ্ছে না। বরং ভারত ক্রমেই পালটু কুমারদের দেশে পরিণত হচ্ছে।' উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রেও এনসিপি এবং শিবসেনাকে ভাঙিয়েই সরকার গঠন করেছে বিজেপি। একনাথ শিণ্ডে এবং অজিত পাওয়ার বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিসরকে জটিল করে তুলেছেন। বিহারে অবশ্য বিজেপি দল ভাঙায়নি, বরং ভেঙেছে জোট।
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায় বলেছেন, 'নীতীশ কুমার যা করেছেন তা রাজনৈতিক ফায়দা তোলা। এর যোগ্য জবাব দেবে জনগণ।' এদিকে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব এই গোটা ঘটনার জন্য বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'নীতীশকে ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়ে বিজেপি মানুষের মতের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। বিহারের মানুষের অপমান করেছে বিজেপি।' এদিকে ডিএমকে-র তরফ থেকে বলা হয়েছে, 'নীতীশ এতদিন ধরে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল জোটের ওপর। জোটের স্বার্থে এতদিন ধরে সেটা সহ্য করছিল ডিএমকে। তবে নীতীশ চলে যাওয়ায় বিরোধী জোটের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না।' এদিকে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও দাবি করেছে যে নীতীশের বিদায়ে ইন্ডিয়া জোট দুর্বল হয়ে পড়বে না। এই সবের মাঝেই আরজেডি প্রধান লালু যাদবের বড় ছেলে তথা বিহারের প্রাক্তন মন্ত্রী তেজ প্রতাপ যাদব লালুকে 'গিরগিটি রত্ন' দেওয়ার কথা বলেন।
এদিকে নীতীশ নিজে ইন্ডিয়া ব্লক ছেড়ে কী বলেন? বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'সবকিছু ঠিকঠাক ছিল না। সাংবাদিকরা আমাকে এর মাঝে অনেক প্রশ্ন করছিলেন। তবে আমি সেই সব নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমার দল, এবং আরও বহু দিক থেকে অনেক মতামত আমার কানে আসছিল। আমি তাঁদের বক্তব্য শুনেছি। আমি আগের জোট ভেঙে এই নয়া মহাজোট গড়েছিলাম। তবে বিগত দেড় বছর ধরে এই মহাজোটে থাকার পর আমি উপলব্ধি করেছি, এখানেও পরিস্থিতি ঠিক নেই। এই আবহে অনেক মানুষই অনেক দাবি করছিলেন। পালটা দাবি করা হচ্ছিল। এতে মহাজোটের ফাটল আরও চওড়া হচ্ছিল। আমি ইন্ডিয়া ব্লকের জন্য সব কিছু করছিলাম। তবে এর জবাবে কোনও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছিলাম না। দলের পরামর্শ শুনেছি। আমি তাই সব দিক বিবেচনা করে এই মহাজোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইন্ডিয়া ব্লক কোনও কাজই করছে না।'