পরিকল্পনা নিখুঁত ছিল। নাম ভাঁড়িয়ে দিব্যি হরিয়ানার একটি সংস্থায় কাজ করে যাচ্ছিল উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। যে স্ত্রী, দুই সন্তান-সহ মোট ৪ জনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। কিন্তু সমস্ত ছক বানচাল করে দিল একটি দেহের ডিএনএ পরীক্ষা।
২০১৮ সালে ঘটা এই নৃশংস খুনের ঘটনা সম্প্রতি কিনারা করে ফেলল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী। পথের কাঁটা সরাতেই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে খুন করে বাড়ির উঠোনেই তাঁদের দেহ পুঁতে তার উপর দিয়ে এমনভাবে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
এরপরই নতুন গল্প ফেঁদে ফেলে অভিযুক্ত। খুনের কিছুদিন পর কাসগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয় রাকেশ। সেখানে স্ত্রী'র বিরুদ্ধে নিখোঁজ ডায়েরি করে সে। পুলিশকে সে জানায়, তার দুই সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী সবার অলক্ষ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে এদিকে যখন রাকেশ কাসগঞ্জ থানায় স্ত্রী'র নামে নিখোঁজ ডায়েরি করছিল, অন্য দিকে নয়ডা থানায় ওই গৃহবধূর বাবা মেয়ের অপহরণ ও পণের জন্য হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেন। তবে নয়ডা পুলিশ তদন্তে নামলেও কোন সূত্র খুঁজে পাইনি।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে কাসগঞ্জের পুলিশ প্রধান রোহনপ্রমোদ বোতরে বলেন, ‘পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে আরও একটি খুন করেছিল রাকেশ ও তার প্রেমিকা। অনেকটা অভিযুক্তের মতো দেখতে কাসগঞ্জের অপর ব্যক্তিকে প্রথমে অপহরণ করে অভিযুক্ত। পরে খুন করে তাঁর হাত ও মাথা কেটে দেহটি পুড়িয়ে দেয়। ওই মৃত ব্যক্তির গায়ে নিজের জামা পরিয়ে দিয়ে দেহের পকেটে নিজের পরিচয়পত্রও ঢুকিয়ে দেয় রাকেশ। যাতে পুলিশ দেহটাকে রাকেশের বলে শনাক্ত করে।
বোতরে জানান, দেহটি উদ্ধার হওয়ার পর সেটি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষাগার থেকে গত মাসেই কাসগঞ্জ থানার পুলিশকে জানানো হয় যে, মৃতদেহটি রাকেশের নয়। এখান থেকেই তদন্তের মোড় ঘুরে যায়। এরপর প্রকৃত রাকেশের খোঁজে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশ জানতে পারে, হরিয়ানার একটি সংস্থায় দিলীপ শর্মা নামে ভুয়ো পরিচয়ে কাজ করছে রাকেশ। ওই সংস্থার মালিককে নিজেকে উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরের বাসিন্দা বলে পরিচয়ও দেয় অভিযুক্ত। এরপর ওই সংস্থায় হানা দিয়ে রাকেশ ওরফে দিলীপ শর্মাকে সন্দেহের বশে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তাকে জেরা করতেই এই খুনের ঘটনার পর্দাফাঁস হয়। পুলিশি জেরায় স্ত্রী-সহ ওই ৪ জনের খুনের কথা কবুল করে অভিযুক্ত। এরপর রাকেশকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়িতে যায় পুলিশ।