কুকি-মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘাতে উত্তাল হয়ে আছ মণিপুর। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও উঠছে বহু ক্ষেত্রে। এই সংঘর্ষে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন ভুনজাগিন ভালতে। যিনি জনপ্রতিনিধিও বটে। প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও মণিপুরের বিজেপি বিধায়ক ভুনজাগিন ভালতে উঠে দাঁড়াতে পারেননি আর।
মে মাসের শুরুতে ইম্ফলে একদল উন্মত্ত জনতার হাতে ব্যাপক অত্যাচারিত হয়েছিলেন ভালতে। চিকিৎসার পরে তাঁকে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলশক্তিহীন হয়ে বিছানায় শুয়ে মণিপুরের এই বিধায়ক। ভালতে কুকি-জোমি উপজাতি সম্প্রদায়ের সদস্য। বিধায়ক কিংবা অন্য পরিচয়ের থেকে বর্তমানে মণিপুরে এই পরিচিতিই প্রমাণ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসার পর স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও, সুস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে তাঁর, এমনই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দিনের অধিকাংশ সময় বিছানায় শুয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁকে। ধীরগতিতে কারও সাহায্য নিয়ে চলাফেরা করছেন তিনবারের এই বিধায়ক। যিনি কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ। ক্ষীণ কণ্ঠস্বরে কথা বলছেন কষ্ট করে।
ফেরজাওল জেলার থানলনের তিনবারের বিধায়ক এবং প্রাক্তন আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী ভালতে আক্রান্ত হন মে মাসের গোড়ায়। এই সময়ই মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষ নতুন করে ব্যাপক আকার নিয়েছিল। ৪ মে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ডাকা একটি মিটিং থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ভালতে। পথে মেইতেইয়ের সদস্যরা গাড়ি আটকেছিলেন। এরপর শুরু হয়েছিল গণপ্রহার। উন্মত্ত মেইতেই গোষ্ঠীর আক্রমণে ভালতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন। তাঁর মুখের অর্ধেক অংশ এবং বাঁ-চোখ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরদিনই তাঁকে এয়ারলিফট করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আক্রমণের পরে সপ্তাহখানেকের বেশি তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। গণপ্রহারের ফলে তাঁকে বাঁদিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
পরিবার-পরিজন চিন্তায় ভালতেকে নিয়ে। মাঝে-মাঝে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে অধৈর্য হয়ে পড়ছেন তিনি। ছেলে বা অন্য সদস্যদের সহযোগিতায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়ছেন বা বসার চেষ্টা করছেন কখনও-কখনও। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য ১ কোটি টাকার বেশি বিল হয়েছে ভালতে পরিবারের। পরিবারের অভিযোগ, বিজেপির কেউ একবারের জন্যও বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। যদিও বিজেপির দাবি, বিধায়ককে ছেড়ে যাওয়া হয়নি।
কালকাজি এক্সটেনশনের একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে বসে বিধায়কের স্ত্রী মইনু ভালতে দ্য প্রিন্টকে বলেন, মণিপুরে ফিরে যাওয়া তাঁদের পক্ষে আর নিরাপদ নয়। ‘আমরা কোথায় যাব? বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ইম্ফলে ফেরার কোনও উপায় নেই।’ বলেন মইনু ভালতে। কান্না ভেজার চোখে মইনু ভালতে আরও বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রশাসন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না।’
গত তিন মাস ধরে মণিপুরে যে হিংসার আগুন জ্বলছে, তাতে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছেন এবং ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ভিটে ছাড়া হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী এবং অসামরিক সংস্থাগুলি দ্বারা স্থাপিত ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ঘরছাড়া বহু মানুষ।