করোনা সংক্রমণের আতঙ্ককে হার মানিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত বোনের সাহায্যে মণিপুর থেকে গাড়িতে ২,৪০৯ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে গুরুগ্রাম পৌঁছলেন ৪৯ বছরের দেবেশ্বরী।
দুরূহ রক্তের ক্যানসারের আক্রান্ত রোগী দেবেশ্বরীর বোন নিংগোলি (৫৫) গুরুগ্রামের ফোর্টিস হাসপাতালে ভরতি হন জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। প্রথম দুটি কেমোথেরাপিতে সাড়া না দিলেও তৃতীয়বারের চেষ্টা সফল হলে চিকিৎসকরা ইম্ফলে ফোন করেল জানান, নিংগোলিকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে তাঁর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।
পরিবারে একমাত্র দিদি দেবেশ্বরীই সেই অস্থিমজ্জা দান করতে পারেন কারণ চিকিৎসার পররিভাষায় তিনি একজন ‘অ্যালোজেনিক ডোনার’। গত ৭ এপ্রিল গুরুগ্রাম থেকে খবর পেয়েই বোনের জন্য অস্থিমজ্জা দান করার সিদ্ধান্ত নেন দেবেশ্বরী। লকডাউন উঠে যাবে ভেবে ১৫ এপ্রিলের জন্য বিমানের টিকিটও কাটা হয়। কিন্তু এর পরে কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের মেয়াদ বাড়ালে মুশকিলে পড়েন দেবেশ্বরীর পরিবার।
দেবেশ্বরীর মেয়ে ভিলিনা জানিয়েছেন, গুরুগ্রাম পৌঁছতে তাঁর মাকে যাতে পণ্যবাহী বিমানে স্থান দেওয়া হয়, মণিপুর সরকারের কাছে সেই আবেদন জানিয়ে লাভ হয়নি। তার পরেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, গোটা পথ গাড়িতে পাড়ি দেবেন।
লকডাউনে একটি গাড়িতে চালকের সঙ্গে তিন জনের বেশি যাত্রা করতে দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও দীর্ঘ যাচত্রাপথের কথা বিচার করে পরিবারের ৫ জনকে ওই গাড়িতে যাওয়ার অনুমোদন দেয় প্রশাসন। শুধু তাই নয়, গোটা রাস্তায় কোথায় কোথায় তাঁরা বিশ্রাম নেবেন, তার পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাও করে দেয় প্রশাসনই। ভিলিনা জানিয়েছেন, পথে তাঁদের খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন এনজিও সংস্থা এবং রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি অতিথিশালা ও হোটেলে।
শেষ পর্যন্ত গত ২২ এপ্রিল গুরুগ্রামে সপরিবারে এসে পৌঁছান দেবেশ্বরী। তত দিনে ফের কেমোথেরাপির সাহায্যে নিংগোলিকেও কিছুটা চাঙ্গা করে তোলা হয়েছে। অস্থি প্রতিস্থাপনের উপযোগী করার জন্য বেশ কয়েকটি ইঞ্জেকশন নিতে হচ্ছে দেবেশ্বরীকে। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি অনুকূল হয়ে উঠলেই প্রিস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হবে, জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।