মণিপুরে হিংসা থামার কোনও নাম নেই। মাঝে মাঝে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও তা ফের হাতে বাইরে চলে যাচ্ছে। এই আবহে সম্প্রতি সেরাজ্যে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল আট বছর বয়সি এক ছেলে এবং তার মাকে। জানা গিয়েছে এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার রাতে। পশ্চিম ইম্ফল জেলায় ৮ বছর বয়সি এক শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অ্যাম্বুলেন্সে করে। গাড়িতে সেই ছেলের মা এবং আরও এক আত্মীয় ছিলেন। ক্রসফায়ারে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল সেই ছোট্ট ছেলেটি। শিশুটি কুকি সম্প্রদায়ের ছিল।
জানা যায়, পশ্চিম ইম্ফলের ইরইসেম্বা এলাকা থেকে ৮ বছর বয়সি শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে। আহত যুবকের নাম ছিল টনসিং হাংসিং। তার ৪৫ বছর বয়সি মা মীনা হাংসিংও গাড়িতে ছিল তার সঙ্গে। তাছাড়া গাড়িতে ছিলেন ৩৭ বছর বয়সি লিডিয়া লোরেমবাম। অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লাগানোর ঘটনায় এই তিনজনেরই মৃত্যু হয়। এই অমানবিক ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ। এই ঘটনা প্রসঙ্গে এক পুলিশ কর্তা সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'উত্তেজিত জনতা সেই অ্যাম্বুলেন্সকে ঘিরে ধরে। তখন গাড়িতে থাকা মহিলা এবং এক পুরুষ তাদের কাছে কাকুতি মিনতি করেন। তবে সেই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।'
এই হিংসার ঘটনার পর এখনও ছেলে-স্ত্রীর দেহ পাননি মৃত টনসিংয়ের বাবা। জানা গিয়েছে, টনসিং এবং তার মা মীনা কাংচুপে অসম রাইফেলসের একটি ক্যাম্পে থাকছিলেন। গত ৪ জুন সেই এলাকাতে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। টনসিং গুলিবিদ্ধ হয় সেই সময়। পরে অসম রাইফেসলের এক কর্তা ইম্ফলের হাসপাতলের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন। অ্যাম্বুলেন্সটিকে সেনা এসকর্ট করে নিয়ে যায় কিছু দূর। এরপর পুলিশি নিরাপত্তায় এগোতে থাকে অ্যাম্বুলেন্সটি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অ্যাম্বুলেন্সটি ইরইসেম্বায় পৌঁছালে সেখানকার স্থানীয়রা সেটিকে ঘিরে ধরে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতেই জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তোলে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধিতা করে স্থানীয় আদিবাসীরা। এই আবহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল গত ৩ মে। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়ায়। এই আবহে গত এপ্রিল মাসে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতেইদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। সেই হিংসার আগুন এখনও নেভেনি সেরাজ্যে।