গাড়চিরোলির মহাগাঁও গ্রামে একটি পরিবারের পাঁচ সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আলোড়ন পড়ে যায় নাগপুরের এই এলাকায়। তদন্ত করতে নেমে দুই ঘনিষ্ঠ মহিলা আত্মীয়ের সূত্র পায় পুলিশ। তাঁরাই অত্যন্ত মারাত্মক বিষ ‘থ্যালিয়াম’ ব্যবহার করে এই হত্যার চক্রান্ত করেছে।
এই বিষে রঙ, গন্ধ বা স্বাদ নেই। তাই এই বিষকে বিশ্বব্যাপী ‘বিষের বিষ’ নামে পরিচিত। থ্যালিয়াম এমন একটা বিষ যা শুধুমাত্র স্পর্শে বিষাক্ত হতে পারে। শঙ্কর পি কুম্ভরে এবং তাঁর স্ত্রী বিজয়াকে হত্যা করার জন্য এই বিষকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। একইসঙ্গে তাঁদের দু’জন কন্যা এবং এক পুত্রকে বিষটি দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বড় ছেলে, গাড়ির চালক এবং একজন আত্মীয়ও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারপর তাঁরা হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠে। এই পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তিন সপ্তাহের মধ্যে মারা যান। সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখের থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে এই সিরিয়ার হত্যা হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ভাদু গ্রামে। পুলিশ বুধবার এই হত্যার জন্য শঙ্কর পি কুম্ভরের পুত্রবধূ সংঘমিত্রা এবং আত্মীয় রোজা রামটেককে গ্রেফতার করতেই গুজব থামে। তার আগে পর্যন্ত নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ছিল। এই সংঘমিত্রা একজন কৃষি বিজ্ঞানী। বয়স ২২ বছর। প্রতিবেশী রাজ্য তেলেঙ্গানা থেকে থ্যালিয়াম কিনেছিলেন তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের মেরে ফেলতে। সংঘমিত্রার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া এবং ২০ দিনের ব্যবধানে থ্যালিয়ামের মাঝারি থেকে খুব বেশি ডোজ দিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের উপর ধীর গতিতে কিন্তু বেদনাদায়ক মৃত্যু দিতে তিনি রোজার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন।
আরও পড়ুন: এবার কড়া পদক্ষেপ করল কলকাতা মেট্রো, দুর্গাপুজোর সময় ফাঁকি দিলেই জরিমানা
তদন্তে ঠিক কী উঠে এল? তবে বৃহস্পতিবার সংঘমিত্রা পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন। থ্যালিয়াম বিষ ব্যবহার করার কথাও স্বীকার করেছেন। এই বিষ তিনি যেভাবে সংগ্রহ করেছিলেন সেটা সম্পর্কে পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এই বিজ্ঞানী সংঘমিত্রা তাঁর বাবাকে দেখেছিলেন, তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দ্বারা কতটা নির্যাতন হতে হয়েছিল। আর সেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পাঁচ মাস আগে আত্মহত্যা করেন তাঁর বাবা। তারপরই সংঘমিত্রা গোটা পরিকল্পনা ছকে ফেলেন প্রতিশোধ নেওয়ার। এই দেহগুলি থেকে রক্তে ভারী ধাতুর বিষের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে মিলেছে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা উপসর্গগুলি দেখে একমত হয়েছিলেন। মাওবাদী অধ্যুষিত গাদচিরোলির গ্রামে এমন খুনের হাতিয়ার দেখে পুলিশও হতবাক হয়েছিল।