২০১৯ সালে যে সব আসনে বিজেপির জয় রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হল মালদা উত্তর। প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে এই আসন থেকে তৃণমূলের মৌসম বেনজির নূরকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন খগেন মুর্মু। তার পাঁচ বছর আগেই মৌসমের কাছে হেরেছিলেন তিনি, তবে সেবার খগেন ছিলেন সিপিএম প্রার্থী। সময় বদলেছে, খগেন এখনও আছেন লড়াইয়ে। তবে এবার টিকিট পাননি মৌসম। তৃণমূলের হয়ে লড়াইয়ে রয়েছেন প্রাক্তন আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের প্রার্থী মোস্তাক আলম।
মালদা উত্তর লোকসভা নির্বাচনী কেন্দ্রটি তুলনামূলক নতুন একটি লোকসভা কেন্দ্র। উত্তরবঙ্গে এক সময় জাতীয় কংগ্রেসের গড় হিসেবে পরিচিত ছিল এই অঞ্চলটি। এই কেন্দ্রটি ২০০৯ সালে স্বতন্ত্র লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বিভিন্ন সময়ে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করলেও বর্তমানে এই কেন্দ্রের নির্বাচিত সংসদ ভারতীয় জনতা পার্টির খগেন মুর্মু। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৪ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি ভোটার এই কেন্দ্রে ভোটদানে অংশগ্রহণ করেন, কেন্দ্রটি এসসি বা এসটি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত নয়। এই কেন্দ্রতে অবস্থিত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র হল, হাবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্র, গাজোল বিধানসভা কেন্দ্র, চাঁচল বিধানসভা কেন্দ্র, হরিশচন্দ্রপুর বিধানসভা কেন্দ্র, মালতীপুর বিধানসভা কেন্দ্র, রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্র, মালদহ বিধানসভা কেন্দ্র। এই বিধানসভা ক্ষেত্রগুলির মধ্যে হাবিবপুর, গাজোল এবং মালদা বিধানসভা কেন্দ্রগুলি বর্তমানে তপশিলি জাতি বা উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত।
এবারে যে কঠিন লড়াই হবে তা বলাই বাহুল্য। মালদায় প্রচার করে গিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত নরম মাটিতে প্রচারে কসুর করেনি তৃণমূলও। এবার মৌসম নূরকে টিকিট না দেওয়া নিয়ে কিছুটা হলেও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুখে কিছু না বললেও তিনি যে খুব একটা খুশি নন, সেটা অস্বীকারও করেননি নূর। ভোটের দিন তাঁর সমর্থকরা, তাঁর কর্মীরা কি পুরোদমে কাজ করবেন তৃণমূল প্রার্থীর জন্য। সেটা কিছুটা হলেও বোঝা যাবে ৭ মে যখন মালদা উত্তরে ভোট হবে। তবে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা থাকবে সেই ৪ জুন পর্যন্ত।
আসন পরিচয়
এই অঞ্চলটি মালদা জেলার উত্তর অংশ জুড়ে অবস্থিত। আসুন জেনে নেওয়া যাক লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্রগুলিতে ভোটদানের হার কেমন, এই কেন্দ্রগুলিতে রাজনৈতিক দলগুলির কার প্রভাব কতটা। মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রটি ২০০৯ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে এটি মালদা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনটি থেকে জয়লাভ করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মৌসম নূর। ৬.৫ শতাংশ ভোটের মার্জিনে জয়লাভ করেন তিনি। এর পূর্ববর্তী সময়ে এই আসনটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য রেখেছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গনি খান চৌধুরী। ২০০৯ সালের পর ২০১৪ সালে মৌসম নূর এই আসন থেকে জয়লাভ করেন জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে মৌসুম নূর দল পরিবর্ত করে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদান করেন এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে খগেন মুর্মুর কাছে পরাজিত হন প্রায় ৮৪ হাজারের কাছাকাছি ভোটে। দীর্ঘদিনের জাতীয় কংগ্রেসের ঘাঁটিটি দখল করে নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি।
২০১৯ সালের পরবর্তীতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক সমীকরণ কী দাঁড়াল, সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত হাবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়লাভ করে ভারতীয় জনতা পার্টির জুয়েল মুর্মু। ১০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়যুক্ত হন। গাজোল থেকে জয়যুক্ত হন ভারতীয় জনতা পার্টির চিন্ময় দেব বর্মন। এছাড়া মালদা বিধানসভা আসনটিও তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী গোপাল চন্দ্র সাহা। ১৫ হাজারের কাছাকাছি ভোটে তিনি পরাজিত করেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে। চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতিপুর ও রতুয়াতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়যুক্ত হন যথাক্রমে নীহাররঞ্জন ঘোষ, তাজমল হোসেন ও আব্দুল রহিম বক্সি, এবং সমর মুখার্জি। রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রটিতে আব্দুর রহিম বক্সি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে উত্তর মালদা লোকসভা আসনটি কোন দিকে যায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।