ট্র্যাডিশনটা যে একটু-একটু পালটাতে শুরু করেছে, সেটা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সেই পথে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলেন জোকার বিবেকানন্দ মিশন স্কুলের রীতিশা বাগচি। ৪০০ নম্বরের মধ্যে ৩৯৯ পেয়ে আইএসসি পরীক্ষায় রাজ্যে সম্ভাব্য ‘প্রথম’ হলেন কলা বিভাগের ছাত্রী। কিছুটা ভিন্ন পথে হেঁটে রীতিশা জানালেন, তিনি সাংবাদিক হতে চান। প্রাথমিকভাবে ইতিহাস নিয়ে পড়তে চান জোকার বিবেকানন্দ মিশন স্কুলের ছাত্রী। তারপর সাংবাদিকতায় আসতে মুখিয়ে আছেন।
কোন বিষয়ে কত নম্বর পেলেন রীতিশা?
সোমবার দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছে কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ান সার্টিফিকেট এগজামিনেশন (CISCE)। মেধাতালিকা প্রকাশিত না করা হলেও পশ্চিমবঙ্গে সম্ভাব্য প্রথম হয়েছেন রীতিশা। যিনি আর্টস (কলা বিভাগ) নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করেছেন। ইংরেজির পাশাপাশি ইতিহাস, সোশিয়োলজি, সাইকোজলজি এবং লিগ্যাল স্টাডিজের মতো বিষয় ছিল। ইংরেজিতে ৯৯ নম্বর পেয়েছেন। ইতিহাস, সোশিয়োলজি এবং সাইকোজলজিতে পেয়েছেন ১০০। লিগ্যাল স্টাডিজে ৯৬ নম্বর পেয়েছেন। তবে সেরা চারটি বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত নম্বর যোগ হওয়ায় রীতিশার প্রাপ্ত নম্বর দাঁড়িয়েছে ৩৯৯।
আর সেই নম্বর পেয়ে আনন্দে ভেসে গিয়েছেন রীতিশা। তিনি জানান, ছেলেবেলা থেকেই আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। দ্বাদশ শ্রেণিতে তিনি যে বিষয়গুলি নেন, সেগুলি সবই তাঁর ভালোবাসার বিষয়। তবে ইংরেজিতে ৯৯ নম্বর পাওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়েছেন রীতিশা। ইংরেজিতে ১০০-র মধ্যে ১০০ পাবেন বলেই আশা করেছিলেন।
দুর্দান্ত রেজাল্টের পরে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন রীতিশা
তারইমধ্যে রীতিশা বলেন, ‘আমার বাবা-মা খুব খুশি। আমিও খুব খুশি। সকলে খুব খুশি। বন্ধুবান্ধবরা খুব খুশি হয়েছে। খুব ভালো লাগছে। আর শিক্ষকদের অবদান তো সবথেকে বেশি। তাঁদের সাহায্য ছাড়া তো এটা সম্ভবই হত না। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সবসময় পাশে থেকেছেন আমার। এমনকী ক্লাসে যদি কখনও কিছু খামতি থাকত, তাঁরা বলতেন যে তুমি ৯৯ শতাংশ নম্বর পাবে। তাঁরা বলতেন, আমরা জানি যে তুমি ৯৯ শতাংশ নম্বর পাবেন। স্কুলের নাম উজ্জ্বল করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
ভবিষ্যতের লক্ষ্য হিসেবে রীতিশা বলেন, ‘আমি শেষপর্যন্ত সাংবাদিক হতে চাই। এখন আমি ইতিহাস নিয়ে পড়ব।’ আর সেটা বলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠেন রীতিশা। সম্ভবত তিনিও জানেন যে একটা ট্র্যাডিশন পালটাচ্ছেন। আর এটাও সম্ভবত জানেন যে গত বছর আইএসসিতে প্রথম কলকাতার হেরিটেজ স্কুলের মেয়ে মান্য গুপ্তাও মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়বেন বলে জানিয়েছিলেন।
রীতিশার স্কুলের প্রিন্সিপালের প্রতিক্রিয়া
জোকার বিবেকানন্দ মিশন স্কুলের প্রিন্সিপাল অহনা দত্ত বলেন, ‘অসম্ভব খুশি হয়েছি। প্রতি বছর আমাদের কাছে এই দিনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। সারা বছর শিক্ষকরা অমানুষিক পরিশ্রম করেন। সারা বছর একটা পরিকল্পনা থাকে। সেটা বাস্তবায়িত করতে হয়। অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হয়। পড়ুয়াদের অসম্ভব পরিশ্রম থাকে। সবকিছুরই রেজাল্ট এটা। এই রেজাল্টে একদিকে যেমন খুশি, তেমনই এই রেজাল্টের ফলে আমাদের দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেল।’