শিশির গুপ্ত
রামের জন্মস্থান নিয়ে আবারও বিতর্ক উসকে দিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। একটি প্রতিনিধিদলকে রীতিমতো বুক ফুলিয়ে বললেন, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা নয়, বরং নেপালের অযোধ্যাপুরীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভগবান রাম।
গত এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার রামের জন্মস্থান নিয়ে মুখ খুললেন ওলি। যিনি শাসক দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। অবস্থা এতটাই খারাপ যে শাসক দলই আড়াআড়িভাবে দু'ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যদিও ওলি সাফ জানিয়েছেন, সহ-চেয়ারম্যান পুষ্পকমল দাহাল বা প্রচণ্ড এবং দুই প্রধানমন্ত্রী মাধব নেপাল এবং ঝালানাথ খানালের বিরোধিতা সত্ত্বেও এখনও প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছাড়ছেন না তিনি।
দলের অভ্যন্তরে বিরোধীদের পাল্লা ভারী থাকলেও ওলিকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে এখনও সরাতে পারেনি প্রচণ্ড শিবির। নেপালের নয়া মানচিত্র-সহ ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দ্বন্দ্বের রাস্তা বেছে নেওয়ায় দলের অভ্যন্তরেই সবথেকে বেশি চাপে পড়েছেন ওলি। তা সত্ত্বেও গত মাসেই ওলি দাবি করেছিলেন, রামের জন্মস্থান নেপালের অযোধ্যাপুরীতে। সেই মন্তব্যকে 'হাস্যকর' হিসেবে অভিহিত করেন নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা। যারা ভারতের পায়ে পা তুলে বিবাদ পাকানোর জন্য ওলির পদক্ষেপকে ‘অকূটনৈতিক’ এবং ‘বিরক্তিকর’ বলেছেন।
যদিও ওলির মন্তব্যের পর তড়িঘড়ি নেপালের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সাফাই দেওয়া হয়েছিল, রামায়ণে উল্লিখিত জায়গা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সাফাইয়ের পর বিষয়টি ছেড়ে দেয় ভারত। কিন্তু নয়াদিল্লির নরম অবস্থানের সুযোগে শনিবার ফের একই বিষয় খুঁচিয়ে তুলেছেন ওলি।
সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে যে ওলি নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন, তিনিই রামের জন্মস্থান সংক্রান্ত পরিকল্পনা আলোচনার জন্য চিতওয়ান জেলার মাদির একটি প্রতিনিধিদলকে দু'ঘণ্টা সময় বরাদ্দ দেন। মাদির মেয়র ঠাকুর প্রসাদ ধাকালকে অযোধ্যাপুরীকে রামের জন্মস্থান হিসেবে প্রচারের পাশাপাশি মূর্তি তৈরির নির্দেশ দেন ওলি। বৈঠকে পুরসভার নাম পালটে অযোধ্যাপুরী রাখার প্রস্তাবও ওঠে।
যদিও ওলির সেই চেষ্টার বিরোধিতা করেছেন নেপালের ধর্মীয় নেতারা। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজোয় অংশ নেওয়া জানকী মন্দিরের পুরোহিত আচার্য দুর্গাপ্রসাদ গৌতম সাফ জানান, ওলির দাবির সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তা একেবারেই যুক্তিসংগত নয়।
নেপালের কূটনৈতিক মহলের মতে, ধর্ম নিয়ে ওলির যে হঠাৎ আগ্রহ বেড়েছে, তার মূলে রয়েছে চিনের প্রতি অনুগত আরও হওয়া। অর্থাৎ চিন ও নেপালে চিনের দূতকে বার্তা দেওয়া যে ভারতের বিরুদ্ধে সবথেকে বড় বাজি হলেন ওলি, যাতে বেজিংয়ের সহায়তা পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির এক নেপাল বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ওলি চিনকে প্রাণপণে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে কাঠমান্ডুতে চিনের স্বার্থ পূরণের জন্য তিনি অপরিহার্য।’