সম্প্রতি ইয়েনে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সেই নিমিশার মাকে এবার ইয়েমেনে যাওয়ার অনুমতি দিল দিল্লি হাই কোর্ট। ইতিমধ্যেই সেদেশের সুপ্রিম কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন নিমিশা। এখন তাঁর বাঁচার একমাত্র উপায় 'ব্লাড মানি'। আর সেই আবহে নিমিশার মাকে ইয়েমেনে যেতে দিতে সম্মত হল দিল্লি হাই কোর্ট। প্রসঙ্গত, ভারত সরকারের বিদেশনীতি অনুযায়ী ইয়েমেনে যাতায়াতের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। আর তার জন্যেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিমিশার মা। এই আবহে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রহ্মণিয়াম প্রসাদ রায়দান করে জানান, নিমিশার মা ইয়েমেনে মেয়ের জন্য প্রাণভিক্ষা চাইতে যেতে পারবেন। (আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায়, পক্ষে ভোট দিল ভারত)
উল্লেখ্য, এক ইয়েমেনি নাগরিককে খুন করার দায়ে নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল ইয়েমেনের দায়রা আদালত। পরে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান নিমিশা প্রিয়া। ২০১৮ সাল থেকে আদালতে লড়াই চালাচ্ছিলেন প্রিয়া। অবশ্য কয়েকদিন আগে সেদেশের শীর্ষ আদালতেও সেই মামলায় হেরে যান প্রিয়া। এদিকে নিমিশাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য 'ব্লাড মানি' দাবি করেছে মৃত মেহদির পরিবার। কিন্তু কী এই ব্লাড মানি? আসলে কিছু মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এই বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থায় মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিলে তাঁরা ঘাতককে ক্ষমা করে দিতে পারেন। সূত্রের খবর, প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইয়েমিনি রিয়াল মুদ্রা চাওয়া হয়েছে ব্লাড মানি হিসাবে। তারপরই ক্ষমা করা হবে নিমিশাকে। এই আবহে বিদেশে গিয়ে মেয়ের প্রাণভিক্ষা চাইতে নিমিশার মাকে অনুমতি দিল দিল্লি হাই কোর্ট।
কে এই নিমিশা প্রিয়া?
নিমিশা প্রিয়া ছিলেন কেরলের পলক্কড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন। কর্মসূত্রে ইয়েমেনে নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং মেয়ে ভারতে ফিরে আসে। এদিকে ২০১৬ সালে ইয়েমন থেকে যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। সেই সময় ইয়েমেনের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতেন। সেখানেই তলাত আবদো মেহদির সঙ্গে পরিচয় হয় প্রিয়ার। পরবর্তীতে প্রিয়াকে মেহদি একটি ক্লিনিক খোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কারণ ইয়েমেনে কোনও বিদেশি নাগরিক যদি ক্লিনিক খুলতে চায়, তাহলে তাকে স্থানীয় কারও সঙ্গে পার্টনারশিপে তা খুলতে হবে। সেই কারণেই মেহদিকে প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার। এই আবহে ২০১৫ সালে মেহদির সাহায্যে ক্লিনিক খোলে প্রিয়া।
পরে মেহদির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় প্রিয়ার। মেহদি প্রিয়ার থেকে তাঁর পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। এর জেরে সেই দেশেই আটকে পড়েন তিনি। এদিকে প্রিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিত মেহদি। এর জেরে মুসলিম দেশে পুলিশের সাহায্যও পায়নি প্রিয়া। নানান ভাবে প্রিয়াকে অত্যাচারও করত মেহদি। পরে কোনও ভাবে প্রিয়া পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেহদির নামে। ২০১৬ সালে গ্রেফতারও হয় মেহদি। পরে অবশ্য সে ছাড়া পেয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মেহদিকে ঘুম পাড়ানো ইনজেকশন দেয় প্রিয়া। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, লুকিয়ে রাখা পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে ভারতে ফিরে আসা। তবে সেই ইনজেকশনের ওভারডোজে মৃত্যু হয় মেহদির। প্রিয়া এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে মেহদির দেহটি কেটে ক্লিনিকের ট্যাঙ্কে রেখে তারা পালায়। পরে ২০১৮ সালে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন প্রিয়া।