২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পরে এক তরুণীর উপরে নৃশংস অত্যাচার ও তাঁর সঙ্গীকে বেধড়ক মারধরের পরে ফেলে পালিয়ে যায় ৬ দুষ্কৃতী। ২৯ ডিসেম্বর তরুণীর মৃত্যু হয়। শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘটনায় জড়িত ৪ দুষ্কৃতীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
‘নির্ভয়া’ হিসেবে পরিচিতা নিহত তরুণী ও তাঁর পুরুষ সঙ্গীর উপরে অকথ্য অত্যাচার চালানো এই ছয় দুষ্কৃতী সেই অভিশপ্ত রাতে ঠিক কী কী করেছিল, কতটা গুরুতর ছিল তাদের অপরাধ, দেখে নেওয়া যাক পিছন ফিরে।
• দক্ষিণ দিল্লির সাকেতের এক সিনেমা হলে ‘লাইফ অফ পাই’ ছবি দেখে অটোরিকশায় মুনিরকা বাস স্ট্যান্ডে রাত ৯টা নাগাদ পৌঁছন তরুণী ও তাঁর বন্ধু।
• বাড়ি ফেরার জন্য কোনও গণপরিবহণ না পেয়ে শেষে একটি বেসরকারি বাসে তাঁরা উঠে পড়েন।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ আইনি জটের শেষে ৪ আসামির ফাঁসি, একনজরে ঘটনাপঞ্জি
• বাসে উঠে তাঁরা চালকের কেবিনে চার জন এবং বাসের ভিতরে দুই জনকে বসে থাকতে দেখেন। তাদের মধ্যে একজন ডানদিকে এবং অন্য জন বাঁ দিকের আসনে বসেছিল।
• বাঁ দিকের সারির দ্বিতীয় আসনে পাশাপাশি বসেন তরুণী ও তাঁর বন্ধু। বাসভাড়া হিসেবে দেন ২০ টাকা।
• বাস বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছলে চালকের কেবিন থেকে তিন জন বেরিয়ে এসে বাসের পিছনে এসে বসে। তাদের মধ্যে দু’জন তরুণীর বন্ধু যুবককে গালিগালাজ করতে শুরু করে এবং জানতে চায় এতো রাতে তরুণীকে নিয়ে তিনি কোথায় যাচ্ছেন।
• কথা কাটাকাটি শুরু হলে আচমকা যুবককে আঘাত করে একজন। পালটা আঘাত করলে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাকিরা। বাসে পড়ে থাকা লোহার রড দিয়ে যুবককে পেটানো হয়।
• বন্ধুকে বাঁচাতে তরুণী এগিয়ে এলে তাঁকে ধাক্কা মেরে পিছনের আসনে ফেলে দেওয়া হয়।
• এরপর যুবককে মারধর করার ফাঁকে তরুণীকে একে একে ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা।
• এতেই ক্ষান্ত না হয়ে লোহার রড যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে তরুণীর দেহের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উপড়ে ফেলা হয়।
• শুধু তাই নয়, যুগলের সঙ্গে থাকা অর্থ, ঘড়ি ইত্যাদি লুঠপাটও করা হয়।
• এরপর তাঁদের চলন্ত বাসের পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু দরজা খুলতে না পেরে তাঁদের বাসের সামনের দরজার সামনে নিয়ে এসে বিবস্ত্র অবস্থায় মহীপালপুর ফ্লাইওভারের কাছে ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাস নিয়ে পালায় ৬ দুষ্কৃতী।
• রক্তাক্ত বিবস্ত্র যুগলকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পরে পুলিশে খবর দেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
• প্রত্যক্ষদর্শীরাই চাদর এনে যুগলের শরীর ঢেকে দেন। তারপর তাঁদের সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে শুশ্রূষার পরে যুবককে ছেড়ে দেওয়া হলেও তরুণীর শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি হতে থাকায় তাঁকে দিল্লির এইমস হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানেও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকায় তাঁকে সিঙ্গাপুরের সেন্ট মেরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখে সেখানেই মৃত্যু হয় 'নির্ভয়া'র।