আশঙ্কার দোলাচলের মধ্যে দাম বাড়ছিল। এবার ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণার পরই আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপিছু অপরিশোধিত তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেল। তার ফলে আট বছরে এই প্রথমবার আন্তর্জাতিক বাজারে ১০০ ডলারের গণ্ডি ছাড়াল অপরিশোধিত তেলের দাম।
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তেল উৎপাদক হল রাশিয়া। যা ইউরোপের বিভিন্ন তৈল শোধনাগারে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে। সেইসঙ্গে ইউরোপের সবথেকে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাসের (৩৫ শতাংশের মতো) জোগান দেয়। সেই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণার পরই ব্যারেলপিছু অপরিশোধিত তেলের দাম ১০০.৪ ডলারে পৌঁছে যায়।
ভারতের উপর প্রভাব
এমনিতে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাত শুরুর পর থেকেই বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের বাড়তে শুরু করে। তা সত্ত্বেও ভারতের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পথে হাঁটেনি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), ভারত পেট্রোলিয়াম এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। যে তিন সংস্থার দখলে ভারতের জ্বালানি তেলের বাজারের ৯০ শতাংশ আছে। তিন মাস ভারতে বাড়েনি জ্বালানি তেলের দাম। যদিও তার আগে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও ভারতে সেভাবে পেট্রল এবং ডিজেলের দাম কমেনি। বরং দাম বেশি রেখে বাড়তি শুল্ক আদায় করা হচ্ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট শেষ হওয়ার পর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের জেরে যেভাবে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে, তাতে ভারতে পেট্রল এবং ডিজেলের দর আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার জেরে মুদ্রাস্ফীতি লাগামছাড়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দাম বাড়তে পারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। মধ্যবিত্তের হেঁসেলে আগুন ধরবে।
বিষয়টি নিয়ে মোতিলাল ওসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের কমোডিটি অ্যান্ড কারেন্সি রিসার্চের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া যদি কম অপরিশোধিত তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস কম জোগাতে বাধ্য হয়, তাহলে তেলের দাম এবং বিশ্ব অর্থনীতির উল্লেখজনক প্রভাব পড়বে। বিশ্বে যত তেল ব্যবহৃত হয়, তার প্রতি ১০ ব্যারলের মধ্যে এক ব্যারেলের জোগান দেয় রাশিয়া। তাই তেলের দামের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত যত বাড়বে, তত পেট্রল পাম্পে ভারতীয়দের পকেট হালকা হবে। যদিও কয়েকদিন আমেরিকা জানিয়েছিল, রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস জোগানের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে না।