জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি রাজ্যে সংখ্যালঘু চিহ্নিত করার আর্জি জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় কেন্দ্রকে নোটিশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
২০০৪ সালের ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনোরিটি এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনস অ্যাক্ট'-এর ২ (এফ) ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন বিজেপি নেতা ও আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। যে ধারার আওতায় পাঁচটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে (মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ এবং পার্সি) সংখ্যালঘু বিশেষ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রের।
পিটিশনে জানানো হয়েছে যে রাজ্যভিত্তিক সংখ্যালঘু নির্ধারণ করা হোক। যাতে শুধুমাত্র ধর্মীয়, ভাষাগত সম্প্রদায়ের মানুষরা নিজের পছন্দের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা করতে পারে। যাঁরা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে অপ্রভাবশালী এবং সংখ্যার নিরিখেও কম।
গত বছর ডিসেম্বরে একইরকমের আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতর দ্বারস্থ হয়েছিলেন উপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে ১৯৯২ সালের ‘ন্যাশনাল কমিশন অফ মাইনোরিটিজ অ্যাক্ট’-এর ২(সি) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। ১৯৯২ সালে ২৩ অক্টোবর সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তার উপর ভিত্তি করে সেই আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সারাদেশে জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ এবং পার্সিদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও বিজেপি নেতার আর্জি খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘ভাষাগত ভিত্তিতে রাজ্যগুলি তৈরি হয়েছে। কিন্তু ধর্ম হল দেশব্যাপী।’
নয়া পিটিশনেও একই বিষয়ে তুলে ধরেছেন উপাধ্যায়। তবে কিছুটা ঘুরপথে। ‘ন্যাশনাল কমিশন অফ মাইনোরিটিজ অ্যাক্ট’ চ্যালেঞ্জ না করে ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনোরিটি এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনস অ্যাক্ট’-এর আওতায় সংখ্যালঘু নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
পিটিশনে জানিয়েছেন, লাক্ষাদ্বীপ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে মুসলিম, চণ্ডীগড় ও পঞ্জাবে শিখ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তা সত্ত্বেও সেই সম্প্রদায়ের মানুষরা সংখ্যালঘু সংক্রান্ত যাবতীয় সুবিধা পান। কিন্তু সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুরা নিজেদের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে পারেন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে উপাধ্যায় জানিয়েছেন, লাদাখে ৪৬ শতাংশ, লাক্ষাদ্বীপ ৯৬.৫৮ শতাংশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে ৯৫ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন। কিন্তু সেখানে তাঁরা সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচিত হন। একইভাবে পঞ্জাবে ৫৭.৬৯ শতাংশ শিখ এবং লাদাখে ৫০ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ থাকা সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছামতো সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি ও পরিচালনা করতে পারেন ওই সম্প্রদায়ের মানুষরা।
একইসঙ্গে পিটিশনে ২০০২ সালে টিএমও পাই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ১১ সদস্যের বেঞ্চেরও রায় তুলে ধরা হয়েছে। সেই রায়ে রাজ্যভিত্তিক সংখ্যালঘু নির্ধারণের উপর জোর দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। উপাধ্যায়ের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায় লঙ্ঘন করেছে ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনোরিটি এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনস অ্যাক্ট’।
সেই মামলায় জবাব তলব করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, আইন মন্ত্রক এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রককে নোটিশ পাঠিয়েছে বিচারপতি এস কে কৌলের নেতৃৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। পিটিশনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়ে রাজি হয়েছে শীর্ষ আদালত। ছ'সপ্তাহ পর আবারও মামলাটির শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।