দেউলিয়া দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে আগেই হাত বাড়িয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। সেই সহযোগিতার অংশ হিসাবেই মঙ্গলবার একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাঙ্ক প্রথম পর্যায়ে যে সাহায্য করেছিল, সেই বাবদ শ্রীলঙ্কা ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্ক গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছে যে তারা ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট এবং কল্যাণ সহায়তা অনুমোদন করেছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে সবচেয়ে গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারতের দক্ষিণের এই দ্বীপরাষ্ট্রটি।
‘আমরা আনন্দিত যে বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে বাজেট সহায়তার জন্য ৫০০ মিলিয়নের মার্কিন ডলারের মধ্যে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রথম ধাপে বিতরণ করা হয়েছে’ শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল বাজেটের সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হবে এবং অবশিষ্ট ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক সংকটের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হবে। ২০২২ সালের এপ্রিলে যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়, ব্যাপক জনগণের বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে, বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তা দ্বীপ রাষ্ট্রটি রান্নার গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হয়।
প্রসঙ্গত শ্রীলঙ্কার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর, ফারিস হাদাদ জারভোস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্বব্যাঙ্ক চাইছে প্রাথমিক ভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কাঠামোগত সংস্কার এবং দরিদ্রদের সুরক্ষার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে।’ বাস্তবে কেবল মাত্র শ্রীলঙ্কা নয়, প্রথম বিশ্ব থেকে তৃতীয় বিশ্ব, প্রতিটি দেশই কমবেশি অর্থনৈতিক সংকটে আছে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটকে আরও তরান্বিত করেছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি। এখন শ্রীলঙ্কার মত ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রের পক্ষে এই অসম যুদ্ধ জয় সত্যিই সহজ নয়, তবে আশাবাদী শ্রীলঙ্কা সরকার। আপাতত জনরোষ, বিক্ষোভের ঘটনাও দেখা যাচ্ছে না। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সকলেই।
বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতির কারণে শ্রীলঙ্কা ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। দেশটির অর্থনীতি মহামারি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতিও জীবনযাত্রার ব্যয়কে অস্বাভাবিক করে তুলেছে। একারণেই দেশব্যাপী বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটেছিল ২০২২ সালে, যা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারকে উৎখাত করেছিল। এখন দেখার বর্তমান সময়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির মত সমস্যাগুলির মোকাবিলায় কতটা সফল হয় শ্রীলঙ্কা।