যখন ইএমআই-এর ওপর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মোরেটোরিয়াম দিয়েছে, তখন অদেয় ঋণের ওপর ব্যাঙ্কগুলি সুদ নিচ্ছে কেন? একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময় এই প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও আরবিআইকে রীতিমত শক্ত প্রশ্নের সামনে ফেলে দেয় শীর্ষ আদালত।
এদিন তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘একদিকে আপনারা মোরেটোরিয়াম দিচ্ছেন, অন্যদিকে সুদও নিচ্ছেন। এতো আরো ক্ষতিকারক’। বৃহস্পতিবার এভাবেই নিজেদের অবস্থান এই বিষয় কার্যত স্পষ্ট করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার আরবিআই জানিয়েছিল যে মোরেটোরিয়ামের মেয়াদকালে তারা ঋণের ওপর সুদ মুকুবের পক্ষে নয় কারণ এতে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক হাল খারাপ হয়ে যাবে।
এদিন অশোক ভূষণ, এস কে কৌল ও এম আর শাহের ডিভিশন বেঞ্চ প্রথমেই উষ্মা প্রকাশ করে কেন আরবিআইয়ের জবাব মিডয়ায় প্রকাশিত হয়ে গেল। আবেদনকারীর উকিল বলেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বেসরকারি ব্যাঙ্ক নিয়ে খুব চিন্তা কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা তারা ভাবছেন না। সুপ্রিম কোর্ট এদিন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাকে বলেন যে জুটি জিনিস তাদের দেখতে হবে- একটি হল মোরেটোরিয়ামের সময় যে ঋণ জমে যাচ্ছে ও দ্বিতীয় হল এই সুদের ওপর যে সুদ দিতে হবে সেটি। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র ও আরবিআইকে একযোগে কাজ করে একটি সমাধানসূত্র বার করতে বলেন এই দুটি বিষয়ের ওপর। ১২ জুন ফের এই বিষয়টির শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।
বুধবার আরবিআই জানিয়েছে যে তারা ঋণের ওপর সুদ মুকুব করার পক্ষপাতী নয় কারণ এতে ব্যাঙ্কগুলির ওপর আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। ঋণের ইএমআই দেওয়ার ওপর মার্চ ১ থেকে অগস্ট ৩১ অবধি মোরেটোরিয়াম দিয়েছে আরবিআই। কিন্তু এই সময়ে অদেয় ঋণের ওপর সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। এর বিরোধিতা করে জনস্বার্থ মামলা করেছেন গজেন্দ্র শর্মা নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন যে লকডাউনের সময় মানুষের পক্ষে রোজগার করা সম্ভব নয়। তাহলে সুদ নেওয়া হচ্ছে কেন। একটি দোকান চালান গজেন্দ্র। তাঁর আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে ৩৭ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া আছে। এই পিটিশনের ভিত্তিতে আরবিআইকে নোটিস দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
আরবিআই নিজেদের উত্তরে বলেছে যে তারা মনে করে না যে জোর করে সুদ মুকুবের পথে যাওয়া উচিত। এতে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থা বেহাল হবে ও লগ্নিকারীরা সংকটে পড়বেন বলে মনে করে আরবিআই। যারা টাকা রেখেছেন তাদের স্বার্থ রক্ষা করা ও ব্যাঙ্কদের আর্থিক স্থায়িত্ব দেখার কাজ তাদের, জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এই দ্বিতীয় কাজের জন্য এটা প্রয়োজনীয় যে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও তারা লাভ করে। ঋণের ওপর সুদ ব্যাঙ্কগুলির আয়ের একটি বড় পথ যেটা তাদের আর্থিক ভাবে স্থিতিশীল ও লাভজনক হতে সাহায্য করে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।