ইউক্রেনের বুকে রাশিয়া যুদ্ধের দামাম বাজাতেই SWIFT থেকে রাশিয়াকে ছেঁটে ফেলার আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। SWIFT শব্দের সম্পূর্ণ অর্থ সেসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন। উল্লেখ্য, এক কথায় বোঝালে, এই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের একটি 'জিমেল' স্বরূপ প্ল্যাটফর্ম। আর সেখান থেকে রাশিয়াকে ছেঁটে ফেলে পুতিনকে মিসাইলের মতো ঘাতক অস্ত্রে শায়েস্তা করতে চাইছে পশ্চিমী দেশগুলো। ১৯৭৩ সালে তৈরি হয়েছে এই সেসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন, যার হাত ধরে বিশ্বের ২০০ এর বেশি দেশের গোপন বার্তা আদানপ্রদান হয়।
বিশ্বের অর্থ লেনদেনে সবচেয়ে বড় দিক হল এই সেসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন। আর এই জায়গা থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দিলে ,পুতিনের দেশের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যের পথ তছনছ হয়ে যাবে। যা কার্য একটি দেশে মিসাইল নিক্ষেপের সমান ধ্বংসাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ইউনাইটেড কিংডম ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই বিধি আরোপে সায় দেয়নি। প্রসঙ্গত, বহু বিশেষজ্ঞের মতে, যদি সেসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যায়, তাহলে তা পশ্চিমী দুনিয়ার জন্যও ঘাতক প্রমাণিত হতে পারে। উল্লেখ্য, এই প্রথম SWIFT থেকে রাশিয়াকে ছেঁটে ফেলার কথা হচ্ছে না। এর আগেও ২০১৪ সালে যখন পুতিনের দেশ ক্রিমিয়ার দিকে পা বাড়িয়েছিল তখনও একই দাবিতে সরব হয় আমেরিকা।
উল্লেখ্য গোটা দিনে SWIFT দিনে ৪০ মিলিয়ন বার্তা সরবরাহ করে থাকে। এতে বিভিন্ন পেমেন্টের নির্জেশ ও নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত বার্তা থাকে। এর মাধ্যমে চলে মুদ্রার মূল্য নির্ধারণ। চলে বাণিজ্য। এটি এতটি সদস্য নির্ভর কো অপারেটিভ। যা অবস্থিত রয়েছে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। ২০১২ সালে ইরানকে SWIFT থেকে ছাঁটাই করা হয়। এরপরই, দিনে ৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি থেকে ইরান পৌঁছে যায় দিনে ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানিতে। ফলে ইরানের বাণিজ্যে প্রভূত ক্ষতি হয়ে যায়। তবে ২০১৪ সালে যখন রাশিয়াকে SWIFT থেকে ছেঁটে ফেলার বার্তা দেওয়া হয়,তখনই পাল্টা হুমকিতে রাশিয়া জিডিপির ৫ শতাংশ সংকোচনের হুমকি দেয়। ২০২০ সালে SWIFT এর মারফৎ মোট লেনদেনের ১.৫ শতাংশ ঘটেছে রাশিয়ার হাত ধরে। তবে রাশিয়া ইতিমধ্যেই নিজস্ব ব্যাঙ্কিং মেসেজ সিস্টেম তৈরি করে ফেলেছে। SPFS বা' ফিনান্সিয়াল ব্যাঙ্কিং মেসেজিং সিস্টেম অফ রাশিয়া'র মাধ্যমে মস্কো নিজের দেশের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে বার্তা পাঠিয়ে থাকে।
তবে যাবতীয় পরিস্থিতির পরও ইউরোপিয় ইউনিয়ন কিন্তু সন্তর্পণে চলেছে পথ। কারণ, তেল ও গ্যাসের জন্য ইউরোপের একটা বড় অংশ নির্ভর করে রয়েছে রাশিয়ার উপর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা মেটায় রাশিয়া। রাশিয়ার রাজনীতিবিদরা ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়েছেন যে, যদি SWIFT থেকে রাশিয়াকে ছাঁটাই করা হয়, তাহলে গ্যাস ও তেলের সরবরাহে পড়বে বড় প্রভাব।