গব্বর সিং নেগি। তিনি যে সত্যি গব্বর সেটা বোঝা গেল ১৭ দিনের সুড়ঙ্গ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার পর। তাঁর টিমের ৪০ সদস্য ছিল। সবাই আটকে সুরঙ্গে। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে। তবে এই গব্বর ভিলেনের ভূমিকায় দেখা দেননি। বরং সাহসের সঙ্গে সদস্যদের পাশে দাঁড়াতেই দেখা গেল। আর তাই গোটা দেশে এখন এই গব্বর চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। লালপানি এলাকার এই ব্যক্তিকেই বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি সবার শেষে বেরবো। কারণ আমি সবার সিনিয়র।’ লড়াইটা ছিল সাক্ষাৎ মৃত্যুর সঙ্গে। খিদে, তেষ্টা, হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় অবিচল ছিলেন এই ব্যক্তি। সুরঙ্গের মধ্যে সবাইকে সাহস জুগিয়েছেন।
আর সর্বক্ষণ সহকর্মীদের সাহস জুগিয়েছেন একজনই—গব্বর। তিনি সুরঙ্গের মধ্যে বুঝিয়েছেন, আসল পরীক্ষাটা মানসিক শক্তির। জো ডর গয়া, উও মর গয়া। তাই জিততে হবে এবং বাঁচতে হবে। মঙ্গলবার রাতে উদ্ধারের মুহূর্তেও কর্তব্যে অবিচল ছিলেন গব্বর সিং নেগি। ৪০ শ্রমিক একে একে বেরিয়ে আসার পর নিজের দেওয়া কথা মতো সুরঙ্গ থেকে বেরলেন তিনি। বুধবার রাতে শ্রমিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তাই ‘গব্বর’–এর সাহসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। তাঁর প্রশংসা করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিও। সবাইকে আগে বের করে যখন গব্বর বেরিয়ে এলেন তখন সবাই করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানালেন।
এদিকে গব্বর সিং নেগির প্রশংসা করছেন সহকর্মী থেকে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরাও। তবে গব্বর এখন হাসপাতালে। নিয়ম অনুযায়ী, চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। চলছে স্বাস্থ্যের পরীক্ষা–নিরীক্ষা। তাঁর বাড়ি থেকে সুড়ঙ্গ প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দূরে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া তাঁর চেনা। কিন্তু আটকে পড়া শ্রমিকদের বেশিরভাগই ভিন রাজ্যের। তাই সুড়ঙ্গের অন্ধকারে কেমন করে প্রাণরক্ষা হবে সেটা গব্বর অভিভাবকের মতোই দিশা দেখিয়েছেন বাকিদের। সহকর্মীদের যোগাসন শেখানো থেকে শুরু করে ধ্যান করতে বলেছেন বারবার। গব্বর জানতেন, এই সঙ্কটের মুহূর্ত থেকে বেঁচে ফিরতে হলে দরকার সকলের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে চাঙ্গা রাখা।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলরদের পর তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কের বাড়ি, মুর্শিদাবাদে হানা দিল সিবিআই
অন্যদিকে বুধবার সকালে চওড়া হাসি দেখা যায় সকলের মুখে। সুরঙ্গের বাইরে বেরিয়ে সবাই আত্মীয়, পরিবারের সদস্যদের ফোন করে খবর দেন। আর গব্বর সিং নেগির স্ত্রী যশোদা দেবী সংবাদসংস্থা পিটিআইকে চোখের জল ফেলে বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার রাতে দীপাবলি পালন করেছি। যখন সুখবর পেলাম। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই তিনি যা করেছেন আমাদের সঙ্গে। আমার স্বামী যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এই নিরাপদ উদ্ধারকাজ করার জন্য। আমি তখন নিশ্চিন্ত হলাম যখন স্বামীর ফোন পেলাম।’