বাংলাদেশে এখন একটা টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে। একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, আরেকদিকে মুদ্রাস্ফীতি। ঘরে বাইরে দু'দিকের চাপেই জর্জরিত পড়শি দেশ। এরই মাঝে সেই দেশের চা শ্রমিকরা পথে নেমেছেন আন্দোলন করতে। প্রায় দু'সপ্তাহ ধরে চলছে তাঁদের আন্দোলন। তাঁদের একটাই দাবি, মজুরি বাড়াতে হবে এবার।
বর্তমানে চা শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা করে মজুরি পান। কিন্তু এখন সেই টাকা দিয়ে ঠিক মতো খাবারই কেনা যাচ্ছে তো পড়াশোনা, চিকিৎসার মতো অন্যান্য জরুরি জিনিস কোথা থেকে করাবে? একজন চা শ্রমিক একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান বর্তমানে তাঁরা পরিবারের মুখে মোটা দানার ভাত অবধি তুলে দিতে পারছে না। সাধারণ ভোজ্য তেল কেনার টাকা নেই তাঁদের কাছে, সেখানে তাঁরা কী করে পুষ্টি, শিক্ষা, চিকিৎসার কথা ভাববে?
বর্তমান পরিস্থিতি, অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি, বন্যা, ইত্যাদি সবটা মিলিয়েই তাঁরা এই কম মজুরিতে আর সংসার চালাতে পারছেন না বলেই বাধ্য হয়ে পথে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন। এর আগেও, মাত্র দু'সপ্তাহ আগেই যখন পেট্রোপণ্যের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ল তখনও সাধারণ মানুষ পথে নেমেছিল প্রতিবাদ করতে। এখন এক চা শ্রমিকরা। বারংবার বাংলাদেশের বুকে প্রতিবাদের মিছিল আছড়ে পড়ছে। অসন্তোষের আগুন যেন ধিকিধিকি করে জ্বলছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে।
রবিবার, ২১ অগস্ট সিলেট-ঢাকা হাইওয়ে অবরোধ করেন প্রতিবাদকারীরা। তাঁদের দাবি কী?
চা শ্রমিকদের ইউনিয়নের তরফে একটাই দাবি করা হচ্ছে তাঁদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করতে হবে। অর্থাৎ একেবারে ১৫০ শতাংশ মজুরি বাড়াতে বলছেন তাঁরা। বাংলাদেশে সব থেকে কম মজুরি বা মাইনে এই চা শ্রমিকরাই পান বলে জানা গিয়েছে। সীতারাম বিন নামক একজন চা শ্রমিক, তথা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের একজন কমিটি মেম্বার জানান তাঁদের এই আন্দোলনে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি শ্রমিক যোগ দিয়েছেন। এবং যতদিন না তাঁদের এই দাবি মানা হচ্ছে ততদিন কাজ বন্ধ থাকবে বলেই তিনি জানিয়েছেন।
সরকারের তরফে ২৫ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল কিন্তু তাতে রাজি হননি তাঁরা। অন্যদিকে বমচা বাগানের মালিকেরাও পড়েছেন অথৈ জলে। যেহেতু প্রোডাকশন খরচ বেড়েছে, সেহেতু চা বাগান মালিকদের লাভ কমছে দিন দিন, ফলে তাঁরাও একটা দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তবুও তাঁরা বলেছিলেন যে ১৪ টাকা করে বাড়ানো হবে প্রতিদিনের মজুরি। কিন্তু তাতে রাজি হননি শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বড় চা উৎপাদনকারী দেশ। যদিও এই দেশে মূলত সিলেট অঞ্চলেই চা উৎপাদন করা হয়, এবং ২০০ টি চা বাগানে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করেন। বাংলাদেশের চা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সে যায়। কিন্তু এভাবে যদি শ্রমিকরা কাজ থামিয়ে দেন তাহলে চা উৎপাদনের গতিও কমতে কমতে থমকে যাবে একটা সময়। কোন পথে এই সমস্যার সমাধান বেরোয় এখন সেটাই দেখার।