শহিদ স্বামীর কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কথা রাখলেন।জেদে অটল থেকে সেই সেনার উর্দি চাপিয়ে নিলেন পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় সেনা জওয়ানের স্ত্রী নিকিতা কৌল ঢৌনদিয়াল। স্বামীর মৃত্যুর ২ বছর পর ভারতীয় সেনার লেফট্যানেন্ট পদে নিযুক্ত হলেন তিনি। সেনার উর্দির মধ্যেই খুঁজে পেলেন স্বামীর উপস্থিতি।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় শহিদ হন নিকিতার স্বামী বিভূতি।২ বছর আগে যখন বিভূতির মৃত্যু হয়, তখন নিকিতা দিল্লির একটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে নিকিতা শপথ নিয়েছিলেন, তিনিও একদিন না একদিন সেনার উর্দি গায়ে জড়িয়ে নেবেন।
মৃত্যুশোক চেপে রেখে এক মাসের মধ্যে সেই বহুজাতিক সংস্থার কাজ ছেড়ে দিলেন তিনি।শুরু করলেন সেনা পরীক্ষার প্রস্তুতি। ২০২০ সালে শর্ট সার্ভিস কমিশন ও তারপরে সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হন তিনি। চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণও নেন তিনি। ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় তাঁর জানতে চাওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে বিবাহিত জীবন কত বছরের। নীকিতার উত্তরে ২ বছর শুনে সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।একইসঙ্গে ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা সকলকে নিকিতা জানিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী বিভু শারীরিকভাবে নেই ঠিকই কিন্তু সবসময় তাঁর সঙ্গে তিনি রয়েছেন।শেষ পর্যন্ত সকলকে অবাক করে দিয়ে সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট পদে কাজ শুরু করলেন নিকিতা।গায়ে জড়িয়ে নিলেন সেনার উর্দি।
জানা যায়, নিকিতার সঙ্গে বিভূতির পরিচয় এমবিএ করার সময় থেকে। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপরে প্রেম আর প্রেম থেকেই বিয়ে। তবে বেশিদিন দুজনের বিবাহিত জীবন কাটেনি।তারপরেই সব শেষ। স্বামীর কফিমবন্দি দেহ যখন তাঁর কাছ এসেছিল, তখন কাঁদতেও দেখা যায়নি তাঁকে। শুধু স্বামীর মুখের দিকে শুধু চেয়েছিলেন।মাঝে মধ্যে স্বামীর কানের কাছে মুখ রেখে বলে উঠছিলেন, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি বিভু।’ সেদিনই ২৮ বছরের এই তরুণী ঠিক করে ফেলেছিলেন, স্বামীর পথ অনুসরণ করে সে–ও সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। আজ পূর্ণ হল সেই মনোবাঞ্ছা। দেশমাতৃকার জন্য স্বামীর পথ অনুসরণ করলেন নিকিতা।