তৃতীয় কোয়ার্টারেই বদলে গেল ম্যাচের রং। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ। হিসেব বদলে দিয়ে বাজিমাত করল মেনস ইন ব্লু। ১-৩ থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে ৩-৩ করে ফেলে ভারত। তার পর আকাশদীপ সিং-এর গোলে ৪-৩। ১-৩ থেকে ৪-৩ করাটা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু চেন্নাইয়ের সবুজ টার্ফে সব অঙ্কের হিসেব এদিন বদলে দিলেন হরমনপ্রীত সিংরা।
২০১৮ সালের পর ফের এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিরোপা জিতল ভারত। এই নিয়ে মোট চার বার। ভারত দাপটের সঙ্গে এবার ফাইনালে উঠেছিল। শনিবার ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয়েছিল মালয়েশিয়ার, যারা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই প্রথম বার ফাইনালে উঠেছিল। যাদের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের ম্যাচে ৫-০ সহজ জয় পেয়েছি ভারত। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচের সেই দলের একেবারে অন্য চেহারা। ভারতকেই বিপাকে ফেলে দিয়েছিল মালয়েশিয়া। ভারতের প্রথম গোলের পর হয়তো ক্রেগ ফুলটনের টিমের মধ্যে আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল। যে কারণে তাদের বড় ধাক্কা খেতে হয়। তবে ১-৩ পিছিয়ে পড়েও, যে ভাবে ভারত প্রত্যাবর্তন করেছে ম্যাচে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য ভারতই এগিয়ে গিয়েছিল। ৯ মিনিটেই ১-০ করে ফেলে তারা। জার্মানপ্রীত সিংয়ের সৌজন্যে পেনাল্টি কর্নার পেয়ে যায় ভারত। ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত সিং তখন মাঠের বাইরে। তাঁর বদলে ড্র্যাগ ফ্লিকারের ভূমিকায় ছিলেন যুগরাজ সিং। তিনিই ১-০ এগিয়ে দেন ভারতকে।
তবে এর পর থেকে খেলার রাশ ধীরে ধীরে নিজেদের দখলে নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। ম্যাচের ১৪ মিনিটের মাথায় অমিত রোহিদাসের একটা ভুল থেকে সমতা ফেরায় তারা। ডি-বক্সের বাঁ-দিকে বিপক্ষের এক ফরোয়ার্ডকে আটকাতে গিয়ে নিজেই বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। আর সেখান থেকেই আজরাই আবু কামাল গোল করে সমতা ফেরান। ১-১ করে মালয়েশিয়া। এর মিনিট খানেক পরেই অবশ্য হার্দিক সিং পেনাল্টি কর্নার আদায় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি মনদীপ, বিবেকরা।
এর পর দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ম্যাচের ১৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি কর্নার থেকে মালয়েশিয়াকে ২-১ এগিয়ে দেন দলের তারকা প্লেয়ার রহিম রাজি। অমিত রোহিদাসের স্টিকে লেগে বল ঢুকে যায় গোলে। কিপার কৃষণ পাঠকের কিছুই করার ছিল না। এদিন ফাইনালে মালয়েশিয়া যেভাবে খেলেছে, তাতে তারা দেখিয়ে দিয়েছে, আত্মবিশ্বাসী হলে এবং ফোকাস ঠিক রাখতে পারলে, যে কোনও আগ্রাসী টিমকেও চাপে ফেলে দেওয়া যায়।
মূলত ভারতের গাছাড়া ভাব এবং ভুলের সুযোগ নিয়েই ৩-১ করে এগিয়ে যায় মালয়েশিয়া। ম্যাচের ২৭ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে মহম্মদ আমিনুদ্দিন। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের মধ্যেই এশিয়া সেরার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া। কিন্তু তখনও যে আরও নাটক বাকি ছিল।
তৃতীয় কোয়ার্টারের দেড় মিনিটেই বদলে গেল পাশা। চাপে পড়েও হার মানেনি ভারত। বরং দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করে তারা। ৪৪ মিনিটে ব্যবধান কমালেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত। তৃতীয় কোয়ার্টার শেষ হওয়ার আগেই ভারত সমতায় ফেরে। দলগত ছন্দেই খেলার ফল ৩-৩ করলেন গুরজন্ত সিং।
এর পর ম্যাচের ৫৬ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করলেন আকাশদীপ সিং। মালয়েশিয়ার ডি বক্সে টার্ন নিয়ে যে শটটা নিলেন আকাশ, অনেক দিন মনে রাখবে ভারতীয় হকি। আর মনে রাখবে ৭ গোলের রোমহর্ষক এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এর পর আর ম্যাচে ফিরে আসতে পারেনি মালয়েশিয়া। ৪-৩ ফলে ম্যাচ জিতে এশিয়া সেরা হয় ভারতই। স্বাধীনতা দিবসের আগেই চেন্নাইয়ের মেয়র রাধাকৃষ্ণণ হকি স্টেডিয়ামে ‘বন্দেমাতরম’ শব্দব্রহ্ম।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।