শুভব্রত মুখার্জি:- ফিফা ক্রমতালিকায় ২৫ নম্বরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল। সেই অজিদের বিরুদ্ধেই এএফসি এশিয়ান কাপে শনিবার দুরন্ত লড়াই করেছে ভারতীয় দল। প্রথমার্ধ গোলশূন্য ভাবেই শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে ভারত দুটি গোল হজম করে ম্যাচ হেরেছে। ম্যাচ হারলেও সুনীল ছেত্রী, সন্দেশ ঝিঙ্গানদের লড়াই এদিন ছিল মনে রাখার মতো।ফুটবলে অন্যতম পরাশক্তি অজিদের বিরুদ্ধে ম্যাচে হারার হতাশা তো রয়েইছে ভারতের। তবে পাশাপাশি রয়েছে লড়াই করার তৃপ্তিও। দিনশেষে ভারতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিম্যাচের গলাতেও ধরা পড়ল সেই তৃপ্তির সুর। যদিও ম্যাচ হারের হতাশাও প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইগর স্টিম্যাচের গলাতে। তবে প্রথমার্ধে শক্তিশালী অজিদেরকে কোনও গোল করতে না দেওয়াতে কোচ হিসেবে দলের ফুটবলারদের নিয়ে তিনি যে গর্বিত তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
শনিবার অজিদের কাছে ২-০ ফলে হারের পরে ইগর স্টিম্যাচ জানিয়েছেন, 'অস্ট্রেলিয়া শারীরিকভাবে আমাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। তাই আমরা জানতাম ম্যাচটা এই কারণেও আমাদের জন্য বেশ কঠিন হতে চলেছে।ম্যাচ কঠিন হলেও আমরা যা ফল পেয়েছি তাতে আমাদের খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু সব মিলিয়ে ম্যাচ থেকে দলের অনেক ইতিবাচক দিক পাওয়া গিয়েছে আমাদের জন্য। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দুটো গোল করেছে।তবে সেগুলো কোনভাবেই ওদের অসাধারণ খেলার ফল নয়। বরং আমাদের দায়িত্বজ্ঞনহীনতায় আমরা ভুগেছি। ওরা ওই গোলদুটো পেয়ে গিয়েছি।'
স্টিম্যাচ আরো জানিয়েছেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমার্ধে কোনও গোল করতে দিইনি। সমানে সমানে কার্যত লড়াই করেছি। দলের কোচ হিসেবে এটা আমার খুশি হওয়ার অন্যতম কারণ। আমি ছেলেদের এই পারফরম্যান্সে গর্বিত। প্রথমার্ধে আমরা একটাই ভাল সুযোগ পেয়েছিলাম। সেটাও বাইরে চলে যায়। ওই আক্রমণ থেকে আমরা তখন গোল পেতে পারতাম। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। যে খেলার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে তার ধারেকাছেও আমরা পৌঁছাতে পারিনি। আমরা ওই সময়ে সেখানেই আটকে পড়েছিলাম। যেখান থেকে দ্বিতীয় পাস খেলে হাফ লাইন পেরোতে পারছিলাম না। এখানেই আমরা সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা অনুশীলন করেছি। সেখানে অনেক কাজ করেছি। আগামীদিনেও আমরা করব। কিন্তু মাঠে তার প্রতিফলন আজকে পাওয়া যায়নি। ক্রমতালিকায় অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান আমাদের থেকে অনেকটাই আগে। ওদের সঙ্গে আমাদের ফারাক অনেকটাই। তবে ফারাক যাই হোক না কেন, ভারতীয় দলের সব ফুটবলার যদি আজ এই ম্যাচে খেলতে পারত। তা হলে আমি নিশ্চিত জাতীয় দলের জন্য এমন হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হত না। আমরা জানতাম আমাদের সামনে কী চ্যালেঞ্জ আসতে চলেছে।’
তিনি আরও বলেন, 'মাঠের দুই প্রান্ত থেকে উইং ব্যবহার করে আসা ক্রস বন্ধ করার পরিকল্পনা ছিল দলের। ক্রস আসলেও তা দ্রুত ক্লিয়ার করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। এমনই নির্দেশ দিয়েছিলাম ছেলেদের। ওরা প্রথম কাজটা ঠিকমতো করতে পারেনি। তবে পরের কাজটা কিন্তু নিখুঁত ভাবে করতে পেরেছে। অস্ট্রেলিয়া ৩০টারও বেশি ক্রস বক্সে করেছে।তবে এত বেশি ক্রস করলেও ওরা গোলের দিকে কোনও ভাল হেড করতে পারেনি। সে জন্য দলের এই পারফরম্যান্সে আমি খুশি। তা ছাড়া আমাদের ছেলেদের তুলনায় শারীরিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলাররা কত এগিয়ে তা নিশ্চয়ই সবাই দেখেছেন। তারপরেও দলের ছেলেদের এমন লড়াকু পারফরম্যান্সে আমি খুব খুশি।'
স্টিম্যাচের মতে, 'আজকের ম্যাচে সাহাল, আনোয়ার, আশিকরা থাকলে আমাদের পাসিং আরও ভাল হতে পারত। মিডফিল্ডে বল ধরেও রাখতে পারতাম বেশি আমরা । তবে আমাদের ছেলেদের কাছে এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। ম্যাচ শুরুর আগে সাজঘরে সবাইকে বলে দিয়েছিলাম, সমর্থকরা যারা এখানে এসেছেন আমাদের সমর্থন করছেন তাদের জন্য,আমাদের দেশের জন্য আমাদের ভাল খেলতেই হবে। এদিনের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে অন্তত ৬০ মিনিট আটকে রাখার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। তারপরে আমরা অ্যাটাকে উঠতাম। সেদিকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলাম। যখন আমরা ম্যাচে আমাদের দলে পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ঠিক তখনই ৫০ মিনিটের মাথায় প্রথম গোলটা খেয়ে যাই। এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৪০ মিনিট খেলা মোটেই সোজা ছিল না। কিন্তু এটাই ফুটবল। এই ম্যাচে আমাদের ফুটবলাররা খুব ভাল অভিজ্ঞতা অর্জন করল। ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা খুবই কাজে লাগবে।'
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।