প্রায় তিন বছর পর মোহনবাগান মাঠে কলকাতা লিগের ম্যাচ হল। আর সেই ম্যাচেই গ্যালারি ভরা সমর্থকের সামনে উঠল ঝড়। কখনও মেঘ, কখনও বৃষ্টি, তার মাঝেই আগুন জ্বালালেন ১৮ বছরের এক তরুণ। তাঁর আগুনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গেল দুর্বল ডালহৌসি এসি। সুহেল আহমেদ ভাটের হ্যাটট্রিকের হাত ধরেই তৃতীয় ম্যাচে ৫-১ বিধ্বংসী জয় ছিনিয়ে নেয় মোহনবাগান।
ঘরোয়া লিগে গত দু’ম্যাচে হয়েছে আট গোল। প্রতিপক্ষকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে মোহনবাগান। রবিবারও ডালহৌসির বিরুদ্ধেও আগুনে পারফরম্যান্স বজায় থাকল সবুজ-মেরুনের। শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ছিল বাগান ব্রিগেড। সবুজ-মেরুনের দাপটের সামনে টিকতেই পারেনি ডালহৌসি। এই দলের বেশ কিছু ফুটবলার আইএসএলে নিয়মিত খেলেন। ফলে দু’দলের খেলার মানের তফাৎটা শুরু থেকেই ধরা পড়ছিল।
জম্মু-কাশ্মীরের ফুটবলার সুহেলের বড় ক্লাব বলতে এটাই প্রথম। এর আগে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের হয়ে খেলেছেন তিনি। যে কারণে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদটা সুহেলের খেলার মধ্যে দেখা গিয়েছে। শুরু থেকেই তিনি আক্রমণে উঠছিলেন। তাঁকে আটকাতে গিয়ে কালঘাম ছুটছিল ডালহৌসির ডিফেন্ডারদের।প্রথম মিনিটেই সুহেল একটি ভালো সেন্টার নিয়েছিলেন। যদিও সেটি সোজা ডালহৌসি গোলকিপারের হাতে চলে যায়।
সুহেল প্রথম গোলের মুখ খোলেন ম্যাচের ২৫ মিনিটে। এই গোলের ক্ষেত্রে নিজের স্কিলের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তারও পরিচয় দেন। বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে এসে সুহেল দেখেন প্রতিপক্ষের কিপার বিক্রম পারিয়া অনেকটা বেরিয়ে এসেছেন। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে নিখুঁত ভাবে তাঁর মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়ান সুহেল। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাগান। বিরতির আগেই সুহেল ২-০ এগিয়ে দেন সবুজ-মেরুনকে। রাইট ফ্ল্যাঙ্ক থেকে বল পেয়ে সুহেল আলতো ছোঁয়ায় বল জালে জড়ান।
বিরতিতে মোহনবাগান ২-০ এগিয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধেও নিজেদের আক্রমণাত্মক মেজাজ বজায় রাখেন সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বিরতির ঠিক চার মিনিট পরেই ম্যাচের ৪৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সুহেল। বক্সের মধ্যে তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলেন বিপক্ষের ফুটবলার। পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। আর হ্যাটট্রিকের এই সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি সুহেল।
আরও পড়ুন: আইজল থেকে আসা তরুণ ফুল ফোটাচ্ছেন, তাঁর একমাত্র গোলেই কলকাতা লিগের দ্বিতীয় জয় মহমেডানের
০-৩ পিছিয়ে পড়ে ডালহৌসির চাপ মারাত্মক চাপ বাড়ে। এর মাঝেই তাদের চাপ আরও বাড়িয়ে মোহনবাগানের ফারদিন আলি মোল্লা ৪-০ করেন। ম্য়াচের ৬০ মিনিটে মূলত ডালহৌসির কিপারের ভুলেই ৪-০ করেন ফারদিন। বাঁ দিক থেকে ভেসে আসা ক্রস ডালহৌসির এক ফুটবলারের গায়ে লাগে। গোলকিপার সেই বল ধরতেই পারেননি। ফারদিন অনায়াসে বল জালে জড়িয়ে দেন।
বড় ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার ফলে বোধহয় একটু গা-ছাড়া ভাব এসেছিল মোহনবাগানের মধ্যে। সেই সুযোগ কাজে লাগায় ডালহৌসি। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে ডালহৌসির শিবা হারি ১-৪ করে ব্য়বধান কমান। কিন্তু ফারদিন আলি মোল্লা ফের ব্য়বধান বাড়িয়ে দেন। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে তিনি ৫-১ করেন। বিনয়ের পাস থেকে নিখুঁত টাচে গোল করেন তরুণ ফুটবলার।
ডালহৌসির হার নিশ্চিত ছিল। তবে কত বড় ব্য়বধানে হারবে, সেটাই দেখার ছিল। তবে ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে আভাস কুণ্ডুর গোলে ব্য়বধান কমায় ডালহৌসি। ৫-২ জয় ছিনিয়ে নেন সবুজ-মেরুন ছেলেরা। মোহনবাগান ৫ গোল করলেও, ২ গোল হজম করেছে। যেটা চিন্তায় ফেলবে সবুজ-মেরুনের কোচ বাস্তব রায়কে। আগেও কলকাতা লিগের ম্যাচে এক গোল খেয়েছিল বাগান। মুড়িমুড়কির মতো গোল হলেও, রক্ষণের গোল খাওয়াটা মোটেও ভালো অভ্যেস নয়। তবে পরপর তিন ম্যাচে বিশাল ব্যবধান জিতে কলকাতা লিগে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।